৬ মাস রানিং বা ৫ মাস সম্পন্ন বাচ্চাকে কি সলিড শুরু করা যাবে?
যদি বাচ্চা পর্যাপ্ত বুকের দুধ পায় এবং অন্য কোন সমস্যা না থাকে তবে ৬ মাস পূর্ণ হলেই বাচ্চাকে সলিড দিবেন, আগে নয়। আগে বাচ্চাকে সলিড শুরু করে বাচ্চাকে অনেক বড় বানিয়ে ফেলতে পারবেন না। বরং ৬ মাস সম্পূর্ণ করার পর সলিড শুরু করলে হজমের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। আগে সলিড শুরু করলে হজমের সমস্যার কারনে উলটো ওজন কমে যেতে পারে।
বাচ্চাকে ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই সলিড শুরু করার কিছু যৌক্তিক কারণ-
বুকের দুধ পর্যাপ্ত পাচ্ছে না। (শুধু ধারণা বশত নয়)
বুকের দুধ রিজেক্ট করছে।
বুকের দুধ খেয়ে বাচ্চার ডায়ারিয়া হচ্ছে। চিকিৎসা করে ভালো হয়নি।
উপরোক্ত কারণে বাচ্চার ওজন অনেক কম, অপুষ্টিতে ভুগছে।
চলুন তাহলে জেনে নেই বাচ্চা খাবারের জন্য প্রস্তুত তার লক্ষণ গুলোঃ
বাচ্চা সাপোর্ট দিয়ে বসতে পারবে।
ঘাড় শক্ত হবে এবং ঘাড়ের কন্ট্রোল আসবে।
অন্যের খাবারের দিকে তাকাবে এবং নিজের দিকে টানবে।
চামচ থেকে কিছুটা হলেও খাবার নিতে পারবে।
খাবার দেয়া হলে জিহবা দিয়ে ঠেলে বের করে দিবে না।
তাহলে জানা হলো যে, ৬ মাস (১৮০ দিন) পূর্ণ হতেই বাচ্চাকে বুকের দুধের পাশাপাশি পারিবারিক খাবারের সাথে পরিচিত করে তুলতে হবে।
কিভাবে শুরু করবেন, বাচ্চাকে কি খাওয়াবেন এবং কত টুকু খাওয়ানো উচিত?
৬ মাস পূর্ণ হবার পর বাচ্চাকে সেমি সলিড খাবার দিতে হবে। প্রথম ১৫ দিন বাচ্চাকে খাবারের সাথে পরিচিত করে তুলতে হবে। এই বয়সে জাই ভাত / সাগু / সুজি দিয়ে খাওয়া শুরু করতে পারেন। এটাই প্রথমে ২-৩ চামচ করে দিবেন ২ বেলা। এভাবেই ৭-১৪ দিন চলবে। বুঝার চেষ্টা করুন। কেন মাত্র ২-৩ চামচ খাবার ৭-১৪ দিন বলা হচ্ছে? কারণ পাকস্থলিকে প্রস্তুত করা হবে। খাবারের সাথে পরিচিত করানো হবে। তড়িঘড়ি করে সব খাবার দিবেন না। বাচ্চাকে শুরুতে সহজপাচ্য খাবার দিতে হবে কারণ বাচ্চার পরিপাকতন্ত্র জটিল খাবার হজম করার জন্য প্রস্তুত নয়।
এর আগে বাচ্চা বুকের দুধের সাথেই শুধু পরিচিত ছিল। তাই বাচ্চা জানে না বাইরের কোন কিছু তার খাবার। স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বাচ্চা খেতে না চাইতে পারে। মুখে দিলে বের করে দিতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে ধৈর্য হারানো যাবে না। বার বার চেষ্টা করতে হবে। ২ সপ্তাহ পর খিচুরী দিতে পারেন। মুগ ডালের দেয়া ভালো। অনেক বাচ্চা মসুর ডাল হজম করতে পারে না। সেটাই সারা দিন খাওয়ান। খেয়াল করুন পায়খানা কেমন হচ্ছে। যদি সব ঠিক থাকে, খাবার হজম হয় তবে পরের দিন খিচুরীর সাথে আলু দেন। আবার খেয়াল করুন পায়খানা কেমন, সব ঠিক আছে কিনা? যদি সব ঠিক থাকে তবে পরের দিন খিচুরীর সাথে অন্য কোন সবজি দিবেন। লাউ, মূলা, কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, পেপে ইত্যাদি। কোন ভারী সবজি না। গাজর, খেজুর এই বয়সে বাচ্চাদের হজম হতে চায়না। তাই এসব এই বয়সে না দেয়া ভালো।
বাচ্চার খাবারে ঝাল নয় এমন মশলা (পেয়াজ, রসুন, তেল ইত্যাদি) যুক্ত করতে পারেন। তেল একটু বেশি দিলে খাবার মজার হয়। পেয়াজ দিলে খাবার সামান্য কিছুটা মিষ্টি হয়। অন্যান্য মিষ্টি সবজি যেমন মিষ্টি কুমড়া দিতে পারেন। এই বয়সে খাবার পরিমাণ হবে ১২৫মিলি প্রতিবার দিনে ২ বার। এছাড়া ১-২ বার নাস্তা দেয়া যেতে পারে। অনেক বাচ্চার খাওয়া শুরু করতেই ১-২ সপ্তাহ লেগে যায়। মনে রাখবেন ৬-৮ মাস বাচ্চার প্রধান খাবার হলো মায়ের বুকের দুধ। তাই আপনার বাচ্চা কম খেলেও অতিরিক্ত চিন্তা করবেন না আবার চেষ্টাও বাদ দিবেন না।
এভাবে একদিনে একটা সবজি জাই ভাত বা খিচুড়ির সাথে যুক্ত করবেন। সাথে মাছ, মাংস যুক্ত করবেন। বাচ্চা খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে এবং খাবার হজম হচ্ছে সেটা কনফার্ম হয়ে গেলে তখন কয়েকটা সবজি, মাছ ইত্যাদি দিয়ে খিচুরী দিতে পারবেন। ৮ম-৯ম এই দুই মাস বাচ্চার খাবার পরিমাণ হবে ১২৫ মিলি করে ২ বেলা সাথে অন্য ২ বেলা হালকা নাস্তা হিসাবে ফল, সবজি, ডিম বা অন্য কিছু দিতে পারবেন। নাস্তা হিসাবে দই, ক্ষীর, চিজ এসব পুষ্টিসমৃদ্ধ। অনেকে ফলের রস দিতে পছন্দ করেন। ফসের রস দেয়া যাবে, তবে সেটা যেন মাত্রা অতিরিক্ত না হয়। ৭-৮ মাস বয়সে যে কোন ফলের রস ১ আউন্স (৩০ মিলি) এবং ১ বছরে ২ আউন্স (৬০ মিলি) দেয়া যাবে।
১০-১২ মাসঃ এই বয়সে বাচ্চার খাবার হবে আরো ঘন, এই বয়সে সলিড খাবার শুরু করা যায়। খাবারের পরিমাণ হবে ১২৫ মিলি করে প্রতিবার ৩ বেলা। এছারা বাচ্চাকে ২ বেলা নাস্তা দিতে হবে। এই বয়সে বাচ্চাকে ফিংগার ফুড শুরু করতে হবে। ছোট ছোট করে কাটা সবজি, ফল দিতে হবে বাচ্চার জন্য। নাস্তা হিসাবে ফ্রেন্স ফ্রাই / আলু ভাজি, মাছের চপ, চিকেন বল, দই, পায়েস, সেমাই ইত্যাদি বা কোন ফল, সবজি ভাজা, পাকোরা বা কর্ণ ফ্লেক্স দেয়া যেতে পারে।
১-২ বছরঃ এই বয়সে বাচ্চাকে ৩ বেলা প্রতিবার ২৫০ মিলি খাবার দিবেন। খাবার হবে স্বাভাবিক সকল পারিবারিক খাবার। এছাড়া ২ বার পুষ্টিকর নাস্তা দিবেন। যদিও বাচ্চা এই বয়সে বুকের দুধ খাবে, খেয়াল রাখতে হবে এই বয়সে বাচ্চার প্রধান খাবার হবে পারিবারিক খাবার। বাচ্চাকে বুকের দুধ বেশি দেয়া যাবে না। অনেক বাচ্চা বুকের দুধে আসক্ত থাকে বলে বাইরের খাবার খেতে চায়না এবং পুষ্টিহীনতায় ভুগে।
খেয়াল রাখবেন আপনার বাচ্চা পর্যাপ্ত আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাবার পাচ্ছে কিনা। আমাদের প্রোটিনের প্রধান উৎস মাছ এবং মাংস। ডিম এবং ডাল ২য় স্তরের প্রোটিন। এজন্য প্রতিবেলা মাছ, মাংস, ডিম এর যে কোন একটা রাখার চেষ্টা করবেন। চাল এবং গম দিয়ে বানানো সব কিছুই কার্বোহাইড্রেট। যেমনঃ ভাত, রুটি, সাগু, নলুডস, আলু ইত্যাদি। চর্বি জাতীয় খাবার বাচ্চার পুষ্টির জন্য খুবই দরকারী। চর্বির প্রধান উৎস তেল, বাটার, ঘি, মাখন, চিজ, ডিমের কুসুম ইত্যাদি। বাচ্চার খাবার ভাজার জন্য বাটার বা ঘি ব্যবহার করতে পারেন। তড়াকারিতে তেল বড়দের তুলনায় কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারেন। মাছের তেল, মাছের চামড়া তেল হিসাবে খুবই স্বাস্থ সম্মত। এছাড়া যে কোন বাদাম রাখতে পারেন প্রতিদিনের খাবারের তালিকায়।
বাচ্চা পর্যাপ্ত ফাইবার যুক্ত খাবার খাচ্ছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে। ফাইবার যুক্ত খাবার না খেলে বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। সাধারণত সবজি, শাক, ফল, লাল আটা এসবে যথেষ্ট ফাইবার থাকে। এসব খাবার একই সাথে ভিটামিনের ভালো উৎস। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করতে হবে।
আসুন আলাদা আলাদা করে কিছু খাবার নিয়ে জেনে নেইঃ
পানিঃ বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে। আমাদেশ দেশ গরম প্রধান বিধায় পানির চাহিদাও বেশি থাকে। ৬ মাসে ১২০ মিলি। ৯ মাসে ১৮০ মিলি এবং ১২ মাসে ২৫০ মিলি পানি খাওয়াবেন (বুকের দুধ ছাড়া)। ১-২ বছরের বাচ্চা প্রতিদিন ১-২ কাপ (২৫০-৫০০ মিলি) পানি খাবে। তবে শীত বা গ্রীষ্মকাল বিবেচনা কওরে বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী কম-বেশি হতে পারে।
ডিমঃ ডিমকে সুষম খাবার বলা হয় কারণ এতে একইসাথে প্রোটিন এবং ফ্যাট পাওয়া যায়। আর আমাদের প্রত্যাহিক খাবারে কার্ব এর প্রাচুর্য থাকায় সেটার অভার হয়না। বাচ্চাকে ৬.৫ মাস থেকে ডিমের কুসুম ট্রাই করতে পারবেন। যদি হজম হয় তবে চলবে। নয়ত বন্ধ করে ৭ম মাসে দিবেন আবার। প্রথমে কুসুম খাবে এরপর সাদা অংশ। পোস করে দিতে পারেন অথবা বয়েল করে পানির সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন।
সুজিঃ ৬ মাস থেকেই দেয়া যায়। তবে সুজি সুষম খাবার নয়, এতে রয়েছে শুধুই কার্ব। তাই বাচ্চা খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গেলে সুজির পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। হয়ত ২-৩ দিন পর পর এক বেলা দিতে পারেন।
দইঃ গরুর দুধ দিলে বানালেও সেটা দেয়া যাবে কারণ দই ফার্মেন্টেশন হয়েই তৈরী হয়। গরুর দুধ ফার্মেন্ট করতেই বাচ্চার সমস্যা হয় যেটা দই এর বেলায় হয় না। একই সাথে দই এ প্রচুর ভালো ব্যাক্টেরিয়া থাকে যেটা বাচ্চার অন্ত্রের ভালো ব্যাক্টিরিয়াকে চাংগা করে এবং হজম শক্তি বাড়ায়।
চিজঃ একই ভাবে চিজও গরুর দুধ দিয়ে বানানো হলেও এটাও বাচ্চাকে দিতে পারবেন। তবে চিজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে আলাদা লবন এড করা চিজ পরিহার করতে হবে।
দুধঃ দুধকে সুষম খাবার বলা হয় কারণ এতে কার্ব, প্রোটিন এবং ফ্যাট সব কিছুই আছে। ২ বছর পর্যন্ত বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ খাবে। তবে ১ বছরের পর থেকে কমিয়ে প্রয়োজন মত দিতে হবে। গরুর দুধ ২ বছরের আগে দেয়া যাবে না। কারণ গরুর দুধ এই বয়সের বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত নয়। তবে ২ বছর হয়ে গেলে বাচ্চার জন্য গরুর দুধ একটি সুষম খাবার।
ঘি / বাটারঃ ৮ মাস থেকেই বাচ্চাকে ঘি-বাটার দেয়া যায়। এটা আসলে নির্ভর করে বাচ্চার হজম শক্তির উপড়। অনেক বাচ্চা ৭ মাস থেকেও এসব হজম করতে পারে। যদি আপনার বাচ্চা হজম করতে পারে তবে নিয়মিত দিতে পারবেন।
খেজুরের গুড় / খেজুরঃ খাবার মিষ্টি করতে খাটি খেজুরের গুড় বা খেজুর দেয়া যাবে। গুড়ের আসল নকল নিয়ে আমরা দ্বিধায় থাকি বিধায় খেজুর ম্যাশ করে খাবারে দেয়া সব থেকে ভালো। খেজুরের গুড়ের ক্ষেত্রে চিনি মিশ্রিত নয় এরকম খাটি খেজুরের গুড় ব্যবহার করবেন।
ফিরনি / পায়েস / পুডিং ইত্যাদিঃ ফিরনি পায়েস দেয়া যাবে তবে গরুর দুধ দিয়ে বানানো যাবে না। ফর্মুলা দুধ দিয়ে বানাতে হবে, যেহেতু ফর্মুলা জ্বাল দেয়া যাবে না তাই ফিরনি-পায়েস বানানোর পর এতে ফর্মুলা দুধ যোগ করতে হবে। একই ভাবে যেহেতু ফর্মুলা জ্বাল দেয়া যাবে না তাই পুডিং বানানো যাবে না। এই সব কিছুই ২ বছরের পর থেকে গরুর দুধ দিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বানিয়ে বাচ্চাকে দেয়া যাবে।
কর্নফ্লাওয়ারঃ বাচ্চার খাবারে প্রয়োজনীয় পরিমাণ কর্ণফ্লাওয়ার দেয়া যাবে। কর্ণফ্লাওয়ার ভুট্টা থেকে তৈরী বিধায় এটা ব্যবহার খারাপ নয়। তবে ভাল মান নিশ্চিত করতে হবে।
চালঃ অনেকে জানতে চান কি চাল ব্যবহার করবেন। সিদ্ধ চাল বেশি সহজ পাচ্য। শুরুতে বাচ্চাকে সিদ্ধ চাল দেয়াই ভালো। তবে চাইলে আতপ চালও ব্যবহার করতে পারেন। যেসব বাচ্চার পায়খানা কষা তাদের অর্গানিক লাল চাল ব্যবহার করবেন কারণ এতে প্রচুর ফাইবার থাকে। পোলাউ এর চাল পায়খানা কষা করে ফেলতে পারে বিধায় অতিরিক্ত পোলাউ এর চাল পরিহার করা ভালো। একই কারণে ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কাচা কলা দিয়ে পোলাউ এর চালের জাই ভাত দেয়া উচিত।
মশলাঃ বাচ্চার খাবারে প্রয়োজনীয় সকল মশলাই প্রয়োজন মত দেয়া যাবে। যেমন রসুন, পেয়াজ, হলুদ, জিরা, ধনিয়া ইত্যাদি। শুধু ঝাল মশলা (মরিচ, আদা) প্রথমে পরিহার করতে হবে। ধীরে ধীরে বাচ্চা বড় হলে সেটাও দেয়া যাবে আপনার বাচ্চার ঝাল সহ্য করার ক্ষমতা বুঝে।
লেবু / মালটা / কমলা লেবুঃ অনেকেই কনফিউজড থাকেন বাচ্চাকে লেবু, কমলা লেবু ইত্যাদি টক ফল দেয়া যাবে কিনা। বাচ্চাকে ৮ মাসের পর থেকেই অল্প পরিমাণে লেবু এবং কমলা লেবু দেয়া যাবে। খেয়াল রাখবেন যেন খুব বেশি না খেয়ে ফেলে। ৮ মাসে অর্ধেক কমলা লেবু বা মালটা খেতে পারবে।
ফলঃ ফল নিয়ে মায়েদের প্রশ্নের শেষ নেই। ৬ মাস পূর্ণ হলেই ফল শুরু করা যাবে। সব ফলই বাচ্চাকে দেয়া যাবে। কোন ফল দেয়া যাবে না এমন নেই। তবে বয়স অনুসারে খুব অল্প করে শুরু করে ধীরে ধীরে কিছুটা বাড়ানো যাবে। একই দিনে হরেক রকম ফল না দিয়ে এক বা দুই রকম দেয়া যেতে পারে। অনেকেই ফলে রাসায়নিক এর ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত। দেশী ফল বাচ্চাকে দেয়া নিরাপদ। যেমনঃ পেয়ারা, আমড়া, বাতাবি লেবু, সফেদা, আতা, বেদানা, বড়ই, পেপে, আমলকি ইত্যাদি। অন্যান্য ফল যেমন আপেল, কলা, নাশপাতি সহ সকল বিদেশী ফলও দেয়া যাবে।
প্রক্রিয়াজাত খাবারঃ প্রক্রিয়াজাত সকল খাবার পরিহার করার চেষ্টা করবেন। যত ঘরে তৈরী খাবার দেয়া যায় বাচ্চার জন্য ততই ভালো। ঘরে তৈরী টাটকা খাবার অনেক বেশি স্বাস্থসম্মত এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ। অন্য দিকে প্যাকেটজাত খাবারে প্রিজারভেটিভ, ফুড কালার এবং কৃত্রিম ফ্লেভার যুক্ত করা হয় যা মোটেও ছোট শিশুর জন্য নিরাপদ নয়।
কি কি পরিহার করবেন?
লবণঃ ১ বছর এর আগে বাচ্চাকে অতিরিক্ত লবণ এবং চিনি না দেয়া উত্তম। বাচ্চাদের অপরিপক্ক কিডনী লবণ ফিল্টার করতে পারে না, অযাচিত চাপ হয় বাচ্চার কিডনীর জন্য। বিভিন্ন প্রকার সল্টি খাবার এবং টেস্টিং সল্ট দেয়া খাবার পরিহার করবেন। তবে আমাদের দেশ গরম প্রধান বিধায় আমাদের দেশের বাচ্চারা অনেক ঘামে এবং ঘামের সাথে শরীর থেকে লবন বের হয়ে যায়। ফলে আমাদের দেশের ক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণে লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে।
চিনিঃ চিনি ব্যবহারে বাচ্চা বড় হলে তার ডায়াবেটিস এর ঝুকি বাড়ে। এছাড়া বাচ্চার দাঁতে ক্যারিজ এর জন্য দায়ী চিনি। খাবার মিষ্টি করার জন্য খেজুর এবং মিষ্টি সবজি ব্যবহার করতে পারবেন।
সেরেলাক এবং ব্লেন্ড করা খাবারঃ সেরেলাকে অনেক কিছু মিক্স করা থাকে। সেরেলাক বা অন্য ব্লেন্ড করা খাবার দিলে বাচ্চা খাবার চিনতে শিখবে না। বাচ্চা কি খাচ্ছে সেটার সঠিক কোন স্বাদ পায়না। ভাতের স্বাদ কেমন, মাছের স্বাদ কেমন, মাংস কেমন, আলু কেমন বাচ্চা এসব কিছুই জানবে না। এসবে বাচ্চা অভ্যস্ত হয়ে গেলে লং টার্মে বাচ্চার ক্ষতি হবে। কারণ ঠিক কোন খাবারটা তার ভাল লাগছে সেটা বুঝবে না। নিজে থেকে কোন খাবার খেতে চাইবে না। বাচ্চার ফেবারেট লিষ্টে কোন খাবার যুক্ত হবে না। ফলে বাচ্চা একটু বড় হলে নিজে থেকে কোন খাবার চাইবে না। একই ধরনের খাবার খেতে খেতে বাচ্চার খাবারে অরুচি দেখা দিবে। একই সাথে সেরেলাকে চিনি, ফুড কালার, প্রিজারভেটিভ এবং কৃত্রিম ফ্লেভার যুক্ত করা হয়। তাই চেষ্টা করবেন সেলেরাক পরিহার করে ঘরে বানানো টাটকা খাবার দিতে।
মধুঃ ১ বছরের আগে মধু দেয়া উচিত না। মধুর ভিতর বটুলিনাম টক্সিন নাকে একটা টক্সিন থাকতে পারে। যেটা বড় মানুষের কোন সমস্যা না করলেও ছোট বাচ্চা এর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। কারণ ছোট বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। যদিও এই ঘটনাটি খুব সচরাচর দেখা যায়না তবুও একটা সম্ভাবনা আছে আক্রান্ত হওয়ার। তাই ১ বছর সম্পন্ন হওয়ার পর বাচ্চাকে মধু দিবেন।
আপেল, কলা ও অন্যান্য ফল সিদ্ধ করে দেয়া যাবে?
আপেল, কলা এবং অন্যান্য বেশির ভাগ ফলে মূলত থাকে ভিটামিন সি এবং বি কমপ্লেক্স। এই দুটো ভিটামিনই হিট সেন্সেটিভ। মানে ৫০-৬০% ভিটামিন রান্নার গরমে নষ্ট হয়ে যায়। তাই যে সব ফল সেদ্ধ না করে খাওয়া যায় সেসব সেভাবে খাওয়াই ভালো। সেদ্ধ করে খেলে সেই ফলে বিদ্যমান শর্করা জাতীয় পুষ্টি পাবে, তবে ভিটামিন অনেকাংশে কমে যাবে।
ফুলকপি গ্যাস করে?
৬-৭ মাস বয়সে গ্যাসের সমস্যা খুব একটা হয়না। যে সব ছোট বাচ্চার গ্যাসের সমস্যা থাকে তাদেরও ৫ মাস থেকে কমে যায়, কোলিক বাচ্চাদের সমস্যাও ৬ মাসের দিকে কমে যায় বা ভালো হয়ে যায়। আর ফুলকপি সবজি হিসাবে ২-১ টুকরার বেশি দেয়া হয়না। তাই অল্প পরিমাণে তেমন কোন সমস্যা করে না। তবে যাদের গ্যাসের সমস্যা বেশি তারা ফুলকপি, বাধাকপি, ব্রোকলি এসব পরিহার করা ভাল।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556 (দুপুর ৩ টায়)
সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল
২৩/৬, রুপায়ন শেলফোর্ড, লেভেল ৮, শ্যামলী। (শিশু মেলার বিপরীতে)
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 09642400300
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd