আমাদের দেশে খুব কমন সমস্যা শিশুর অপুষ্টি। অনেক মায়েরাই এটা নিয়ে চিন্তিত। চলুন জেনে নেই কি কি প্রধান কারণে শিশুর অপুষ্টি হয়, কি করণীয়।
কৃমিঃ প্রথমেই দেখতে হবে বাচ্চা কৃমিতে আক্রান্ত কিনা। কৃমি বাচ্চাদের শরীরের পুষ্টি শুষে নেয়। ফলে শিশুরা অপুষ্টি ও রক্ত শূন্যতায় ভোগে। আমাদের দেশে কৃমির সংক্রমণ খুব খুব কমন একটি বিষয়। কৃমি শুধু বাচ্চাদের নয়, এডাল্টেও খুব কমন সমস্যা। কিন্তু কৃমির সংক্রমণ এর উপসর্গ খুব একটা প্রকাশ পায়না এবং হালকা উপসর্গ দেখা দিলেও সবাই এটা মানতে রাজী হয়না আমাদের দেশে প্রতি ৫ জন এডাল্ট মানুষের ১ জন কৃমিতে আক্রান্ত। বাচ্চাদের বেলায় এই হারটা অনেক বেশি। কৃমি বেশি হলে সেটা অন্ত্রের বা পিত্তথলির নালিতে কৃমি আটকে গিয়ে বড় ধরনের জটিলতাও করতে পারে। এজন্য উপসর্গ না থাকলেও ১ বছরের পর থেকে বাচ্চাকে ৬ মাস পর পর কৃমির ঔষধ দিতে হবে।
রক্তস্বল্পতাঃ আমাদের দেশে রক্তস্বল্পতা বা এনেমিয়া খুবই কমন। বাচ্চাদের মধ্যে কৃমির কারণে রক্তস্বল্পতা বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া আয়রন এর স্বল্পতার কারণে অনেক বাচ্চার রক্তস্বল্পতা হয়। থ্যালাসেমিয়ার কারনে হতে পারে। এছাড়াও আরো বেশ কিছু কারণ আছে বাচ্চাদের রক্তস্বল্পতার।
ডায়ারিয়াঃ যেসব বাচ্চা কিছুদিন পর পর ডায়ারিয়ায় ভোগে তাদের শরীর থেকে নিয়মিত প্রচুর পানি এবং লবণ বের হয়ে যায়। এবং বাচ্চা দূর্বল হয়ে যায়। এর পর বাচ্চা অরুচীতে ভোগে ফলে প্রতিবার ডায়রিয়ার পর ১০-১৫ দিন বাচ্চা ঠিক ভাবে খাবার খায়না।
ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সঃ অনেক বাচ্চার বুকের দুধের প্রোটিন ল্যাকটজে এলার্জি থাকে। এদের অন্ত্রে ল্যাকটোজ হজম করার মত পর্যাপ্ত ল্যাকটেজ এনজাইম তৈরী হয়না। ফলে দুধ খেলেই এদের বদহজম হয় এবং পায়খানায় সমস্যা দেখা দেয়। একারণে বাচ্চা অপুষ্টির শিকার হয়।
ওরাল থ্রাস / সাদা কাইঃ অনেক বাচ্চা এই রোগে আক্রান্ত হয়। মায়েরা কাপড় দিয়ে এটা তুলে ফেলার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। এটা একটা ফাংগাল ইনফেকশন। যার কারণে বাচ্চার অরুচী হয় এবং অপুষ্টির শিকার হয়।
জিংক এর অভাবঃ অনেক বাচ্চা জিংক স্বল্পতায় ভুগে এবং এদের জিংক এর অভাবের কারণে অরুচি হয়। জিংক এর অভাবে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। চামড়া শুষ্ক এবং চামড়া উঠার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আয়রনের কমতিঃ শরীরে আয়রনের অভাবে রক্তাল্পতা দেখা দেয়। আয়রনের অভাব শরীরে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমিয়ে দেয়, ফলে অক্সিজেন সঞ্চালন ঠিক ভাবে হয় না। শিশু হয়ে পড়ে দুর্বল, ক্লান্ত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং রোগ-ভোগ সহজেই হানা দেয় শরীরে, থমকে যায় মস্তিষ্কের বিকাশও! সলিড খাবার শুরুর পর থেকেই তাই যথেষ্ট পরিমাণ আয়রন-সমৃদ্ধ খাবার দিন বাচ্চাকে। আমিষের ভিতর মাংস, মাছ থেকেই চাহিদা মাফিক আয়রন পেতে পারে শিশু।
আয়োডিনের অভাবঃ আয়োডিনের ঘাটতি হলে থায়রয়েড এর কার্যক্রম ব্যাঘাত ঘটে। এর ফলে হাড়ের বৃদ্ধি আটকে যেতে পারে, হানা দিতে পারে মানসিক অসুস্থতাও। তাই মাছ, ডিম, দই রাখুন আপনার শিশুর দৈনিক খাদ্য তালিকায়।
ভিটামিন এর অভাবঃ
- ভিটামিন ডি এর অভাব হলে ক্যালসিয়াম মেটাবলিজম ঠিক ভাবে হয়না। ফলে ক্যালসিয়াম এর অভাব হয়। হাড় হয়ে পড়ে দুর্বল। ভিটামিন-ডি’র ঘাটতিতেই কমে যেতে পারে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। জটিল অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে আপনার শিশুর! ভিটামিন ডি পেতে প্রতিদিন বাচ্চাকে ৩০ মিনিটের জন্য হালকা রোদে খেলতে দিন। এছাড়া কডলিভার অয়েল, চর্বিযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুমে পাওয়া যায় ভিটামিন ডি। ক্যালসিয়াম এর অভাব প্রতিরোধে ভিটামিন ডি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাচ্চাকে নিয়মিত দুধ, চিজ, ডিম এবং আমিষ জাতীয় খাবার দিবেন।
- ভিটামিন-বি১২’র ঘাটতিঃ নতুন রক্ত তৈরি, পাশাপাশি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে সচল রাখতে ভিটামিন-বি১২ এর কোনও বিকল্প নেই। স্বাভাবিক কাজকর্ম সচল রাখতে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষই ভিটামিন-বি১২’র উপর নির্ভরশীল। কিন্তু শরীর নিজে থেকে এর উৎপাদন করতে পারে না। সে কারণেই দরকার পড়ে প্রয়োজনীয় খাবার আর সাপ্লিমেন্টের। এই ভিটামিন-বি১২ মিলবে কেবল প্রাণীজ খাবার থেকেই।
- ভিটামিন-এ’র ঘাটতিঃ শিশুদের চোখের সমস্যার প্রধান কারণ হলো এই ভিটামিন এ এর কমতি! তাছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমতে পারে শরীরে এর অভাব হলে। মিষ্টি আলু, গাজর, ছোট মাছ, শাক-সবজিতে ভিটামিন-এ থাকে ভাল মাত্রায়।
জন্মগত হার্টের সমস্যাঃ আমাদের দেশে বেশ কিছু বাচ্চা পাওয়া যায় হার্টে ছিদ্র নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। এর মধ্যে ASD, VSD এবং PDA বেশি পাওয়া যায়। এই সমস্যা গুলোর উপসর্গ অনেক সময়ই প্রকাশ পায়না। এসব বাচ্চার বার বার ঠান্ডা লাগে এবং ওজন বাড়েনা।
অন্যান্যঃ এসব ছাড়াও বাচ্চার ক্রনিক কোন রোগ আছে কিনা সেটা যাচাই করতে হবে। আমাদের দেশে টিবি বা যক্ষা বেশ পাওয়া যায়। এছাড়া যেসব বাচ্চার বার বার প্রস্রাব, রসপিরেটরী ইনফেকশনে ভুগে তারা অপুষ্টির শিকার হয়।
যাদের বাচ্চা অপুষ্টিতে ভুগছে তাদের উচিত হবে ভালো শিশু চিকিৎসক এর কাছে গিয়ে বাচ্চার শাররীক পরীক্ষা করা। চিকিৎসক বাচ্চার বিস্তারিত হিস্টোরি নিয়ে এবং শাররীক পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় টেষ্ট দিবেন এবং বাচ্চার অপুষ্টির কারন অনুসন্ধান করে বের করে চিকিৎসা করবেন। এসব বাচ্চার পুরো ইভোলিউয়েশন লাগবে। চোখ, বুক, মুখের ভেতর দেখতে হবে, চামড়ার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা লাগবে। রক্তস্বল্পতা আছে কিনা, মুখের ভেতর সাদা কাই বা ক্ষত আছে কিনা এসব গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চার বার বার ডায়ারিয়া হচ্ছে কিনা, পায়খানার সমস্যা, কৃমি এসব বিস্তারিত হিস্টোরি ডাক্তারকে দিতে হবে।
ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে ঘরেই নিয়মিত কৃমির ঔষধ দিবেন। মাল্টি-ভিটামিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ইত্যাদি ২-৩ মাস খেতে পারবে। এছাড়া বাচ্চার খাবারে নজর দিতে হবে। অবশ্যই বাচ্চা খাবারের মাধ্যমে সঠিক প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট এবং ভিটামিন পাচ্ছে কিনা সেটা নিশ্চিত করবেন। ওজন কম হলে বাচ্চার খাবারে আলু, মুরগী এবং বিভিন্ন রকম চর্বি যুক্ত খাবার বাড়িয়ে দিবেন। খেয়াল রাখবেন প্রতিবেলার খাবারে অবশ্যই যেন মাছ-মাছ বা ডিম থাকে। রুচি নষ্ট করে এমন খাবার পরিহার করবেন। বাচ্চার খাবার নিয়ে এই আর্টিকেলটি পড়ে নিবেন।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
রবি, মংগল ও বৃহ, বিকেল ৫ঃ০০ - ৭ঃ০০
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556
ইউনিএইড ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন
2-A/1, দারুস সালাম রোড, মিরপুর-১।
শনি, সোম ও বুধবার, সন্ধা ৭ঃ৩০ - ৯ঃ৩০
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 017333702755
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd