শিশুর অপুষ্টির কারণ ও প্রতিকার
আমাদের দেশে শিশুর অপুষ্টি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। অনেক মা-বাবাই চিন্তিত থাকেন—বাচ্চা ঠিকমতো খায় না, ওজন বাড়ে না, দুর্বল লাগে। চলুন জেনে নিই, কেন শিশুদের অপুষ্টি হয় এবং কীভাবে এর প্রতিকার করা যায়।
শিশুর অপুষ্টির প্রধান কারণসমূহ
১. কৃমি সংক্রমণ
কৃমি বাচ্চার শরীরের পুষ্টি শুষে নেয়, ফলে রক্তস্বল্পতা ও অপুষ্টি হয়। উপসর্গ না থাকলেও ১ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি ৬ মাস পর কৃমির ওষুধ দেওয়া উচিত।
২. রক্ত স্বল্পতা
কৃমি, আয়রনের ঘাটতি বা থ্যালাসেমিয়ার কারণে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এছাড়া অরুচির কারণে পর্যাপ্ত খাওয়া দাওয়ার অভাবেও রক্ত স্বল্পতা হয়। রক্ত স্বল্পতায় বাচ্চা দুর্বল, ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে এবং মানসিক ও শাররীক বিকাশে প্রভাব পড়ে। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার (মাংস, মাছ, ডিম, কলিজা, ডাল) নিয়মিত দিন। বাচ্চাকে ফ্যাকাসে দেখালে শিশু বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা করুন।
৩. বারবার ডায়রিয়া
প্রতিবার ডায়রিয়ায় শরীর থেকে পানি, লবণ ও পুষ্টি বের হয়ে যায়। ফলে বাচ্চার ওজন কমে ও খাওয়ার রুচি নষ্ট হয়। ডায়রিয়ার পর ওআরএস ও হালকা খাবার দিন, পরে জিংক সাপ্লিমেন্ট খাওয়ানো যেতে পারে।
৪. ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স
অনেক শিশুর দুধের ল্যাকটোজ হজম করার এনজাইম (ল্যাকটেজ) কম থাকে। এতে বদহজম, পেট ফাঁপা ও পাতলা পায়খানা হয়, যা অপুষ্টির দিকে নিয়ে যায়।
৫. ওরাল থ্রাস (সাদা কাই)
এটি মুখের ভেতরের একটি ফাংগাল ইনফেকশন। শিশুর খাওয়ার রুচি নষ্ট করে এবং ধীরে ধীরে অপুষ্টি তৈরি করে। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিফাংগাল ড্রপ ব্যবহার করতে হয়।
৬. জিংক ও আয়রনের ঘাটতি
জিংক ঘাটতিতে অরুচি, ত্বক শুষ্কতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আয়রনের অভাবে রক্তাল্পতা হয় ও মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা পড়ে।
৭. আয়োডিনের অভাব
আয়োডিন স্বল্পতায় থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্রম ব্যাহত হয়, যার ফলে শিশুর হাড় ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। খাবারে আয়োডিন যুক্ত লবণ, মাছ, ডিম, দই রাখুন।
৮. ভিটামিনের ঘাটতি
ভিটামিন ডি: রোদে না খেলা, বা দুধ/মাছ না খাওয়ায় হাড় দুর্বল হয়। প্রতিদিন ৩০ মিনিট রোদে খেলতে দিন।
ভিটামিন বি১২: মস্তিষ্ক ও রক্ত তৈরিতে প্রয়োজনীয়। প্রাণীজ খাবারে (মাংস, ডিম, দুধ) পাওয়া যায়।
ভিটামিন এ: চোখের স্বাস্থ্যে ও রোগ প্রতিরোধে জরুরি। গাজর, ছোট মাছ, শাক-সবজিতে থাকে।
৯. জন্মগত হার্টের সমস্যা
ASD, VSD, PDA ইত্যাদি জন্মগত ত্রুটিতে শিশুর ওজন বাড়ে না, বারবার ঠান্ডা লাগে। শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ইকোকার্ডিওগ্রাম করে দেখা উচিত।
১০. অন্যান্য কারণ
যক্ষ্মা, বারবার প্রস্রাবের সংক্রমণ, শ্বাসনালির ইনফেকশন ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী রোগও শিশুর অপুষ্টির পেছনে ভূমিকা রাখে।
শিশুর অপুষ্টির কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার (সংক্ষেপে)
| কারণ | সাধারণ লক্ষণ | প্রতিকার |
|---|---|---|
| কৃমি | অরুচি, পেটব্যথা | ৬ মাস পর পর কৃমির ওষুধ |
| রক্তস্বল্পতা | দুর্বলতা, ফ্যাকাশে ভাব | আয়রনসমৃদ্ধ খাবার |
| বারবার ডায়রিয়া | পানি শূন্যতা, দুর্বলতা | ওআরএস, জিংক, হালকা খাবার |
| ভিটামিন ডি ঘাটতি | হাড় দুর্বল, রোগ প্রতিরোধ কমে | রোদে খেলা, মাছ ও ডিম |
| আয়োডিন ঘাটতি | মানসিক বিকাশে দেরি | আয়োডিনযুক্ত লবণ, মাছ |
| জন্মগত হার্ট সমস্যা | ওজন না বাড়া, ঠান্ডা | পেডিয়াট্রিক কার্ডিও পরামর্শ |
করণীয় ও পরামর্শ
১. শিশুর নিয়মিত ওজন ও উচ্চতা মাপুন (৩ মাস অন্তর), গ্রোথ চার্টে লিখে রাখুন।
২. বয়স ১ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি ৬ মাসে কৃমির ওষুধ দিন।
৩. বাচ্চা যদি ৩ মাসে ওজন না বাড়ায় বা খাওয়ার রুচি না থাকে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম, রোদে খেলা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
৫. খাবারে প্রতিদিন রাখুন —
প্রোটিন: মাছ, মাংস, ডিম
শর্করা: ভাত, আলু
ফ্যাট: ঘি, তেল
ভিটামিন-মিনারেল: ফল ও শাকসবজি
📞 চিকিৎসা পরামর্শ
যদি আপনার শিশুর ওজন না বাড়ে, বারবার অসুস্থ হয় বা খাওয়ার রুচি কমে যায় — দেরি না করে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক পর্যায়েই সঠিক চিকিৎসা নিলে শিশুর বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসে।
সতর্কতা (Disclaimer):
- আর্টিকেলটি শিক্ষামূলক ও সচেতনতামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।
- সঠিক মূল্যায়ন ও চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
© Dr-Adnan Al Berunie
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বার ১:
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতি — বিকেল ৬:০০–৮:০০
সিরিয়ালের জন্য: 01755515556
চেম্বার ২:
ইউনিএইড ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন
2-A/1, দারুস সালাম রোড, মিরপুর-১। শনি, সোম ও বুধ — সন্ধ্যা ৭:৩০–৯:৩০
সিরিয়ালের জন্য: 01333702755
অনলাইন কনসালটেশন: 01671652589 (Whatsapp)
Share via:
