প্রস্রাবে ইনফেকশন ছোট বাচ্চাদের খুবই কমন একটি সমস্যা বিশ্বব্যাপী। এটা বাচ্চাদের জ্বরের অন্যতম একটি বড় কারণও বটে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই প্রস্রাবের ইনফেকশন সব সময় সঠিক ভাবে ডায়াগনসিস হয়না। আজ প্রস্রাবের ইনফেকশন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করবো।
ঘোলা প্রস্রাব (ঘোলা মানে হলুদ নয়, ঘোলা মানে যেটা অস্বচ্ছ)
প্রস্রাবের সময় ব্যাথা হওয়া বা কান্না করা
জ্বরের সাথে উপড়ের দুইটি উপসর্গের যে কোনটি থাকা
কিছুদিন পর পর জ্বর হচ্ছে
বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
ক্ষুধা মন্দা / ওজন বৃদ্ধি না হওয়া
প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া বা লাল প্রস্রাব হওয়া
৬ মাসের ছোট বাচ্চাদের মধ্যে অন্যান্য যে উপসর্গ পরিলক্ষিত হয় সেগুলো হলোঃ অতিরিক্ত কান্না কাটি করা, বুকের দুধ না খাওয়া, প্রস্রাবের সময় অতিরিক্ত কান্না করা ইত্যাদি।
৬ মাসের বড় বাচ্চার ক্ষেত্রে অন্যান্য যেসব উপসর্গ দেখা যায় সেগুলো হলোঃ বার বার অল্প প্রস্রাব হওয়া, তলপেট বা কোমরের দুই দিকে ব্যাথা ইত্যাদি।
উপরোক্ত উপসর্গ গুলো দেখা দিলে বাচ্চাকে ডাক্তার দেখাবেন এবং ডাক্তার কিছু পরীক্ষা করতে দিতে পারেন। এগুলোর মধ্যে আছে Urine R/M/E & C/S, আল্ট্রাসনোগ্রাম। এছাড়াও এডভান্স কিছু ক্ষেত্রে আরো অন্যান্য পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে।
এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা আপনাদের জানা প্রয়োজন সেটা হলো সঠিক উপায়ে প্রস্রাব সংগ্রহ করা। আপনাদের জানা থাকতে হবে আমাদের স্কিনে অনেক ব্যাক্টেরিয়া এমনিতেই থাকতে পারে। তাই সঠিক ভাবে প্রস্রাব সংগ্রহ না করলে অন্যন্য জীবাণু প্রস্রাবে গিয়ে ভুল রিপোর্ট আসতে পারে। আসুন জেনে নেই কিভাবে সঠিক ভাবে প্রস্রাব সংগ্রহ করবো।
প্রথমে ল্যাবে টাকা জমা দিয়ে প্রস্রাবের পট নিয়ে আসবেন। এরপর ছেলে বাচ্চার পেনিস ও পায়ের উপড়ের অংশ ভালো করে সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন। মেয়ে বাচ্চার ক্ষেত্রে উপড়ের দুই লিপ ফাক করে ভালো ভাবে সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিবেন। বাচ্চা যদি ছোট হয় তবে প্যান্ট খুলে অপেক্ষা করবেন। প্রস্রাব করলে চেষ্টা করবেন প্রথমের কিছু প্রস্রাব না নিয়ে কিছুক্ষণ পরের প্রস্রাব সংগ্রহ করবেন। মানে চেষ্টা করতে হবে মধ্যবর্তী সময়ের প্রস্রাব সংগ্রহ করতে। বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যদি পটি ব্যবহার করে তবে পটি ভালো করে সাবান-পানি দিয়ে ক্লিন করে প্রস্রাব করিয়ে সেখান থেকে প্রস্রাব সংগ্রহ করা একটি বিকল্প উপায় হতে পারে। খেয়াল করবেন স্কিন বা পটি পরিষ্কারের ক্ষেত্রে সেনিটাইজার / এলকোহল ইত্যাদি ব্যবহার না করে সাবান-পানি ব্যবহার করা শ্রেয়।
আপনারা অনেক ক্ষেত্রেই রিপোর্ট বুঝতে না পেরে গ্রুপে পোষ্ট দেন। আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের কিছুটা জ্ঞান দেয়া যেন প্রাথমিক ভাবে বুঝতে পারেন সমস্যা আছে কিনা। Urine R/M/E ২-৩ ঘন্টার মধ্যেই প্রস্তুত হয়ে যায়। রিপোর্টে দেখবেন পাস সেল বা WBC বা ব্যাক্টেরিয়া 5-6/HPF এর বেশি কিনা। যদি বেশি হয় তবে প্রস্রাবে ইনফেকশন থাকতে পারে। এরপর চেক করবেন Nitrite পজেটিভ কিনা। যদি পজেটিভ হয় তবে ইনফেকশন থাকতে পারে। এছাড়া প্রস্রাবে কিছু ক্ষেত্রে ইস্ট বা ক্যানডিডা পজেটিভ দেখালে সেটাও ইনফেকশন হতে পারে।
Urine R/M/E দিয়ে প্রস্রাব ইনফেকশন কনফার্ম করা যায়না। কনফার্ম করতেে কালচার (C/S) রিপোর্ট প্রয়োজন যেটা সাধারণত ৩ দিন পর দেয়। এখানে কোন ব্যাক্টেরিয়া পাওয়া গেলে সেটার নাম উল্লেখ থাকে এবং সেটা কি পরিমাণে পাওয়া গেছে সেটাও উল্লেখ থাকে। সাধারণ ভাবে সংগ্রহ করা প্রসাবে কোন একক ব্যাক্টেরিয়া 1 x 10 to the power 5 থাকলে সেটা প্রস্রাবে ইনফেকশন হিসাবে কনফার্ম হয়। একই সাথে জীবানুটি কোন এন্টিবায়েটিকে মারা যাবে (সেনসেটিভ যা S দিয়ে বোঝানো হয়) সেটাও পরীক্ষা করা হয় এবং রিপোর্ট দেয়া হয়। এই সেকশনটি আপনার বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনার ডাক্তার এটা চেক করে প্রয়োজনে এন্টিবায়েটিক চেঞ্জ করবেন বা সঠিক ডোজে এন্টিবায়েটিক দিবেন।
এমন কোন কারণ যদি থাকে যাতে প্রস্রাব থলিতে বা কিডনীতে জমে থাকে এবং বাইরে সহজে বের হতে পারে না তবে সেটা থেকে প্রস্রাব ইনফেকশন হতে পারে। মানে জমে থাকা প্রস্রাব ইনফেকশন প্রবণ হয়ে থাকে।
ছেলে বাচ্চাদের পেনিসের সামনের চামড়া বন্ধ থাকাকে ফাইমোসিস বলে। এক্ষেত্রে প্রস্রাব করার সময় সামনের চামরা ফুলে উঠে এবং প্রস্রাব সঠিক ভাবে বের হতে পারে না ফলে ইনফেকশন সম্ভাবনা বাড়ে। ফাইমোসিস নিয়ে আলাদা আর্টিকেল রয়েছে পড়ে নিবেন। এরকম সমস্যা থাকলে সরাসরি চেম্বারে নিয়ে আসবেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফাইমোসিস ছাড়িয়ে দেয়া যায়।
খৎনা না করানোঃ ছেলে বাচ্চাদের খৎনা না করানো প্রস্রাবের ইনফেকশনের একটা বড় কারণ। ছেলে বাচ্চাদের প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে খৎনা দিয়ে দিতে হবে।
ল্যাবিয়াল এডহেশনঃ মেয়ে বাচ্চার প্রস্রাব ও মাসিকের রাস্তায় পর্দা পরলে প্রস্রাবের ইনফেকশনের প্রবণা বাড়ে। সরাসরি চেম্বারে নিয়ে আসলে ঠিক করে দেয়া যায়।
হাইজিন বা পরিছন্নতার অভাব। সাধারণত মেয়ে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মলদ্বার এবং প্রস্রাবের রাস্তা কাছাকাছি হওয়ায় সহজেই পায়খানা প্রস্রাবের রাস্তায় গিয়ে ইনফেকশন করতে পারে। তাই পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই পিছন থেকে সামনে প্রস্রাবের রাস্তার দিকে ক্লিন করবেন না।
ডায়াপারে পায়খানা হওয়া এবং অনেক্ষণ সেখানেই জমে থাকলে প্রস্রাবে ইনফেকশনের সম্ভাবনা বাড়ে। তাই পায়খানার সাথে সাথে পরিষ্কার করে দিবেন।
দীর্ঘ সময় ভেজা, ওভার ফ্লো ডায়াপার রাখা।
প্রস্রাব জমিয়ে রাখা একটি অন্যতম কারণ। অনেক সময় উঠতি বয়সী বাচ্চারা খেলায় মজে থাকার কারণে প্রস্রাব না করে আটকে রাখে। আবার স্কুলে বা বাইরে পছন্দের পরিবেশ না পেলেও এরকম করতে পারে বাচ্চারা। এগুলো অভিভাবক হিসাবে খেয়াল রাখতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যতা আরেকটি বড় কারণ প্রস্রাব ইনফেকশনের। কোষ্ঠকাঠিন্যতা হলে সাধারণত মল জমে থাকে এবং রেকটাম ফুলে গিয়ে সামনে থাকা প্রস্রাবের নালীকে চাপ দেয় ফলে প্রস্রাবও পুরোপুরি হয়না এবং জমে থাকে ফলে ইনফেকশন হয়। সুতরাং কোষ্ঠকাঠিন্যতা পরিহার করতে হবে।
অন্যান্য কারণ গুলোর মধ্যে আছে প্রস্রাবের নালীর কোন জন্মগত সমস্যা (অস্বাভাবিক সংকোচন বা প্রস্রাবের রাস্তায় পর্দা), পাথর হওয়া। উভয় ক্ষেত্রেই প্রস্রাব বাইরে বের হতে কষ্ট হয় এবং জমে থাকে। এছাড়া রক্তের বা পেটের কোন ইনফেকশন থেকে প্রস্রাবে ইনফেকশন হতে পারে।
প্রস্রাবে ইনফেকশনের ক্ষেত্রে সাধারণত ৭-১৪ দিনের এন্টিবায়েটিক দেয়া হয়। বাচ্চা আগে সুস্থ হয়ে গেলেও কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। কারণ কোন ভাবে ইনফেকশন কিডনীতে চলে গেলে সাধারণত ১৪ দিনের এন্টিবায়েটিক প্রয়োজন। নয়ত কিডনীতে সমস্যা শুরু হতে পারে।
মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের ইনফেকশন কমন। ছেলের ক্ষেত্রে অতটা কমন নয়। তাই ছেলেদের ক্ষেত্রে একবার প্রস্রাবে ইনফেকশন পাওয়া গেলেই কারণ বের করে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। যেটা মেয়ে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত ৩ বার ধরা হয়।
উপড়ে যে কারণ গুলো উল্লেখ করেছি সেসব খেয়াল করে কারণ গুলো পরিহার করতে হবে। বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে এবং প্রস্রাব করাতে হবে।
আশাকরি উপরোক্ত আলোচনা যারা মন দিয়ে পড়েছেন তারা উপকৃত হবেন। প্রয়োজনে ডাক্তার দেখাবেন এবং কারণ বের করে সমাধানের চেষ্টা করবেন।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556 (দুপুর ৩ টায়)
সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল
২৩/৬, রুপায়ন শেলফোর্ড, লেভেল ৮, শ্যামলী। (শিশু মেলার বিপরীতে)
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 09642400300
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd