১. বাবুর বয়স ৯ দিন আজ। গত ৪ দিন ধরে মুখে কপালে র্যাশ হয়েছে।এগুলোর সমাধান কি?
উত্তরঃ এগুলোকে মাসি পিসি / ইরাইথেমা টক্সিকাম নিওনেটারাম বলা হয়। এটা সাধারণত ১০ দিনের ভিতর ভালো হয়ে যায়। বাচ্চাকে শরীরে তেল মাখাবেন না। কাপড় পরিষ্কার রাখবেন। গুমোট পরিবেশ পরিহার করবেন। যদি সাথে জ্বর থাকে বা ভিতরে পুজ থাকে তাহলে ডাক্তারের সাথে দেখা করবেন।
২. বাবুর গায়ে অলিভ ওয়েল দিচ্ছি ২দিন ধরে। সমস্যা আছে কিনা? যদি থাকে তাহলে কবে থেকে দিতে পারব?
উত্তরঃ তেল ১ মাসের পর দেয়া যাবে। গরমের সময় ম্যাসাজের সময় ছাড়া তেল দেয়ার প্রয়োজন নেই। বাচ্চাকে অলিভ ওয়েল দিয়ে গোসলের আগে ম্যাসাজ করে গোসল দিবেন। অলিভ ওয়েল তুলনা মূলক ঠান্ডা।
৩. গোসল করাতে চাচ্ছি পারব কিনা? যদি পারি তাহলে গোসল করানোর নিয়ম কি নবজাতকের?
উত্তরঃ গোসল অবশ্যই দিতে হবে। অনেক মা ভয়ে বাচ্চাকে গোসল দেন না। অনেক মা মনে করেন নাভীতে পানি লাগানো যাবে না। আসলে এসব ঠিক নয়। নবজাতক বাচ্চাকে ১ দিন পর পর গোসল দিতে হবে। অল্প সময়ে গোসল শেষ করতে হবে। চুল ভাল করে শুকাতে হবে।
৪. সবাই বলে মায়ের ঠান্ডা লাগলে বাচ্চার লাগে। তাছাড়া তুলসী পাতার রস খেতে বলে যাতে বাবুর ঠান্ডা না লাগে। এসব কথার সত্যতা কতটুকু?
উত্তরঃ বাসার যে কারো ঠান্ডা লাগলে সেটা বাচ্চার লাগতে পারে এবং অন্যদের মাঝেও ছড়াতে পারে। কারণ এসব বায়ু বাহিত রোগ। তাই সবাইকেই সাবধানে থাকতে হবে। তবে বাচ্চা যেহেতু মায়ের কাছে বেশি থাকে তাই মা বেশি সাবধানতা মেনে চলবেন। অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা করবেন। তুলসী পাতার রস সুস্থ মানুষের খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
৫. আমার বাচ্চা অনেক্ষন ধরে দুধ খায়। ৩০ মিনিট কমপক্ষে, উর্ধে অনেক। থেমে থেমে খায় ঘুমের ভিতরেও। এটা কি নরমাল?
উত্তরঃ আসলে বাচ্চা এতক্ষন দুধ খায় না। দুধ চুষে। যেটা বদ অভ্যাস। এটা এলাউ করবেন না। বাচ্চা ঘুমিয়ে গেলে ছাড়িয়ে দিবেন এবং বাচ্চাকে সাথে নিয়ে ঘুমাবেন অথবা বালিশ দিয়ে সাপোর্ট দিবেন।
৬. গরম পড়েছে তাই মাকে দুধ খেতে নিষেধ করছে কারন বাচ্চার নাকি গরমে তাহলে পেট ফেপে পাতলা পটি হবে। এটা কি আসলেই যৌক্তিক?
উত্তরঃ ১ বছর পর্যন্ত ল্যাকটেটিং মায়ের জন্য গরুর দুধ নিষেধ। কারণ গরুর দুধের ল্যাক্টোজে বাচ্চাদের ইনটলারেন্স থাকতে পারে। গরুর দুধে এলার্জি হতে পারে। তবে সমস্যা গুলো সব বাচ্চার হয়না। আবার এখনও হয়নি বলে ভবিষ্যতে হবে না তেমনও নয়। তাই ১ বছর পর্যন্ত গরুর দুধ পরিহার করাই শ্রেয়।
৭. প্রশ্নঃ সদ্যজাত বাচ্চার কানে অনেক চুল কি স্বাভাবিক?
উত্তরঃ বাচ্চা ৯ মাস বা ৩৬ সপ্তাহের আগে হয়ে গেলে সাধারণত এরকম পাওয়া যায়। এটাকে লেনুগো হেয়ার বলে। সব বাচ্চাই পেটের ভিতর এমন থাকে। ৩৬-৪০ সপ্তাহে এটা কমে যায়। যেসব বাচ্চার জন্মের পরও এরকম কানে অধিক চুল থাকে সাধারণত ৪ মাসের মধ্যে এটা কমে যায়।
৮. প্রশ্নঃ নবজাতকের স্তন ফোলা, টিপে দুধ বের করা যাবে কি?
উত্তরঃ শতকরা ৫ ভাগ বাচ্চার স্তন কিছুটা ফোলা থাকা বা দুধ সাদৃশ বস্তু দেখা যাওয়া বা দুধ নির্সরণ এর মত ঘটনা দেখা যেতে পারে। এটা একদমই স্বাভাবিক। মেয়ে এবং ছেলে উভয় শিশুর ক্ষেত্রে এমন হতে পারে। মায়ের শরীরের কিছু হরমোন বাচ্চার শরীরে চলে আসলে এমন হয়ে থাকে। যেটা কোন চিকিৎসা ছাড়াই ২ মাসে ভালো হয়ে যায়। এর জন্য কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না।
কিন্তু কেউ যদি এই ফোলা কমাতে দুধ বের করতে চেষ্টা করে তাহলে বাচ্চার নাজুক স্তন মারাত্মক ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং সেখানে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় মারাত্মক ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। যেটা নবজাতকের জীবনকে দূর্বিসহ করে তুলতে পারে।
৯. প্রশ্নঃ ১-২ মাসের বিএম বাচ্চা ৩ দিন পর পর পায়খানা করে, স্বাভাবিক কিনা?
উত্তরঃ বাচ্চা শুধু বুকের দুধ খেলে ২-৩ দিন পর পর পায়খানা স্বাভাবিক ভাবেও হতে পারে। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যদি বাচ্চার জন্মের পর প্রথম কালো পায়খানা ৪৮ ঘন্টার পর হয়, বাচ্চার পেট ফোলা থাকে, বাচ্চার মুখমন্ডল বড়-ফোলা থাকে, জন্মের পর অনেক দিন জন্ডিস থাকে, জিহবা বের করে থাকে, মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা পড়ে, মায়ের হাইপো থায়রয়েড থাকে তাহলে অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তারের কাছ থেকে চেকাপ করিয়ে নিতে হবে।
এসব উপসর্গ ছাড়াও কিছু সমস্যা যেমন এনাল ফিশার (পায়খানার রাস্তা ফেটে বা ছিড়ে যাওয়া, পায়খানার রাস্তা জন্মগত ভাবে সরু, মলদ্বার স্বাভাবিক জয়গার থেকে কিছুটা সামনে থাকা ইত্যাদি কারণে বাচ্চার এই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হতে পারে। তাই এরকম বাচ্চা একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারকে দেখিয়ে নেয়া ভালো।
১০. প্রশ্নঃ বুকের দুধ ফ্লো বেশি। বাচ্চা বিষম খায় এবং দুধ খেতে চায়না। কি করণীয়?
উত্তরঃ ছোট বাচ্চা একসাথে বেশি দুধ খেতে পারেনা। তাই বাচ্চা বিষম খেতে পারে বা মুখ সরিয়ে নিতে পারে। এজন্য দুধ খাওয়ানোর সময় অন্য হাত দিয়ে ব্রেষ্টের একটা অংশ চাপ দিয়ে ধরতে হবে, তাতে দুধ কিছুটা কম আসবে। এরিওলার ঠিক ওপড়ে এক তৃতীয়াংশ অংশ অন্য হাত দিয়ে প্রেস করে ধরতে হবে।এছাড়া অন্য একটা উপায় হলো দুধ খাওয়ানোর আগে কিছুটা দুধ ফেলে দিয়ে চাপ কিছুটা কমিয়ে নেয়া। যদি বুকে দুধ জমে গিয়ে ব্রেষ্ট শক্ত হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও বাচ্চা খেতে চায়না। এক্ষেত্রেও দুধি কিছুটা ফেলে স্তন নরম করে খাওয়াতে হবে। অতিরিক্ত ফ্লো থাকলে বাচ্চাকে শুইয়ে আপনার দিকে কাত করে (চিৎ করে নয়) দুধ খাওয়াতে পারেন। এতে বাচ্চার মুখে বেশি দুধ গেলে সেটা সরাসরি গলায় চলে যায়না। এবং খুব অতিরিক্ত দুধ মুখ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগও থাকে।
১১. নবজাতকের মাথার সামনের অংশ নরম থাকে কেন?
খেয়াল করবেন আল্লাহ তায়ালা বাচ্চাদের মাথার খুলির সামনে কিছুটা জায়গা ফাকা রাখেন। এর করন এটাই যে বাচ্চার ব্রেন ডেভেলপমেন্ট এবং মাথার সাইজ বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত জায়গার প্রয়োজন। যেহেতু বাচ্চাদের ব্রেন দ্রুত বৃদ্ধি পায় তাই মাথার সামনের অংশ কিছুটা ফাকা থাকে যেটা ১.৫ বছর থেকে ২ বছরের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556 (দুপুর ৩ টায়)
সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল
২৩/৬, রুপায়ন শেলফোর্ড, লেভেল ৮, শ্যামলী। (শিশু মেলার বিপরীতে)
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 09642400300
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd