গরমে মানুষের রোগ তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়। একই ভাবে গরম কালে শিশুদেরও অধিক রোগাক্রান্ত হতে দেখা যায়। তাই এই সময়ে প্রয়োজন অধিক যত্ন এবং সচেতনতা। চলুন যেনে নেই এই গরমের সময় কিভাবে বাচ্চাদের প্রতি যত্নবান হবো।
গরমে ঘাম প্রতিরোধঃ আমরা সকলেই জানি গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে প্রচন্ড গরম পরে। ফলে জন-জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। বাচ্চাদের শরীর আরো নাজুক বিধায় বাচ্চারা এই গরমের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে না। এমনিতেই বাচ্চারা দ্রুত বিকাশমান বিধায় ওদের ঘাম হয় অনেক বেশি। এটা গরমের সময় আরো বেড়ে যায়। প্রচন্ড ভাবে ঘেমে যাওয়ার কারনে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায় এবং বাচ্চারা পানিশূন্যতায় ভুগতে পারে। বাচ্চাকে খুব গরম এবং আর্দ্র পরিবেশে রাখা যাবে না। এজন্য বাচ্চার কক্ষের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর এজন্য একটি কার্যকরী উপায় হলো এয়ারকন্ডিশনিং। যাদের বাসায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে তারা খুব গরমের সময় বাচ্চার কক্ষের তাপমাত্রা ২৮-২৯ ডিগ্রীতে রাখবেন। খুব বেশি ঠান্ডাও বাচ্চার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। যাদের বাসায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই তারা তুলনামূলক ঠান্ডা এবং কম আর্দ্র কক্ষে বাচ্চাকে রাখবেন। একই সাথে খেয়াল রাখবেন কক্ষের বায়ুপ্রবাহ যত ভালো হবে ততই উত্তম। খুব গরমে ভেজা জামা কাপড় কক্ষে নেড়ে দিলে কিছুটা হলেও তাপমাত্রা কমে। এছাড়া এয়ারকন্ডিশন সামর্থের বাইরে হলে এয়ার কুলার কিনে নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন এয়ার কুলারের বাতাস সরাসরি বাচ্চার গায়ে না লাগে। এয়ার কুলার কক্ষের এক কোণায় রাখবেন যেন কক্ষের তাপমাত্রা কিছুটা কমাতে সেটা ভূমিকা রাখে।
গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করুনঃ গরমে বাচ্চাকে বেশি করে পানি, দুধ ও তরল খাওয়ান। এই গরমে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হবেন না। বাচ্চার অতিরিক্ত ঘাম হলে পানির সাথে লবণও বের হয়ে যায় বিধায় ডাবের পানি, ওরস্যালাইন খাওয়ানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ৬ মাসের বাচ্চাকে ১০০ মিলি, ১ বছরের বাচ্চাকে ১৫০ মিলি, ২ বছর বা তার বড় বাচ্চাকে ২৫০ মিলি ওরস্যালাইন দৈনিক দেয়া যেতে পারে। ৪ মাস+ বয়সের বাচ্চার প্রস্রাব দৈনিক ৪ বারের কম হলে বেশি পরিমাণে বুকের দুধ খাওয়াবেন, পাশাপাশি প্রয়োজন হলে দৈনিক ৫০-১০০ মিলি পানি দিতে পারেন।
প্রস্রাব কমে যাওয়াঃ অতিরিক্ত গরম ও আদ্রতার কারনে বেশি ঘাম হয়ে বাচ্চাদের পানিশূন্যতা হয় এবং প্রস্রাব কমে যায়। ফলে বাচ্চাদের হলুদ গাঢ প্রস্রাব হয় সেটা জন্ডিস কিনা এটা নিয়ে বাবা-মা চিন্তিত হয়ে পরেন। এটা জন্ডিস না। পানিশূন্যতার কারণে প্রস্রাব কমে গিয়ে এরকম হলুদ প্রস্রাব হচ্ছে। জন্ডিসের প্রাথমিক লক্ষণ হলো চোখের সাদা অংশ হলুদাভ হয়ে যাওয়া।
ঘামের কারনে ঠান্ডা সর্দি জ্বর প্রতিরোধঃ দেখা যায় এই গ্রীষ্মকালে বাচ্চারা ঘেমে যাওয়ার কারণে অধিক সর্দি-কাশি-জ্বরে ভোগে। এটার প্রধান কারণ হলো বাচ্চা প্রতিনিয়ত ঘেমে যায় এবং ফ্যানের বাতাসে এই ঘাম শুকায়, পুনরায় ঘেমে যায়; এই চক্র চলতে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চারা ঘুমের মধ্যে ঘেমে ভিজে আছে এবং এর মধ্যেই ঘুমাচ্ছে। এই ঘটনা গুলো পরিহার করতে চেষ্টা করতে হবে। বাচ্চা ঘেমে গেলে সাথে সাথে সুতী কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। মাথা ঘেমে যাচ্ছে কিনা খেয়াল করে একই ভাবে মুছে দিতে হবে। প্রয়োজনে বাচ্চার মাথা ঘেমে যাওয়া কমানোর জন্য চুল ছেটে ফেলা যেতে পারে।
সরাসরি এসি বা ফ্যানের বাতাসে নয়ঃ বাচ্চাকে সরাসরি এসির বাতাসের সামনে বা সরাসরি ফ্যানের বাতাসের নিচে রাখবেন না। এসি খুবই মাইল্ড মুডে রাখবেন এবং বাতাস উপড়ে সিলিং এর দিকে দিয়ে রাখবেন। এরপরও বাচ্চার গায়ে সরাসরি বাতাস লাগলে সামনে কয়েকটি বালিশ উচু করে দিয়ে প্রাচীর এর মত দিয়ে দিতে পারেন। কক্ষে ফুল স্পিডে ফ্যান চালানোর প্রয়োজন পড়লে বাচ্চাকে সরাসরি ফ্যানের বাতাসের নিচে না রেখে কক্ষের কোণায় দিকে রাখা উত্তম। তবে বাচ্চা ঘেমে যাচ্ছে কিনা সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।
গরমে ত্বকের যত্নঃ গ্রীষ্মকালে বাচ্চাদের ঘামাচি এবং র্যাশ প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়। এটার কারণ বার বার ঘেমে যাওয়া এবং আর্দ্র পরিবেশ। এসব র্যাশ এবং ঘামাচি প্রতিরোধের জন্য বাচ্চার ঘেমে যাওয়া প্রতিরোধ করতে হবে। বাচ্চাকে প্রয়োজন মত বেবী পাউডার ব্যবহার করবেন। ঘামাচি বা র্যাশ হলে ঘামাচি পাউডার ব্যবহার করবেন। পাতলা এবং ঢিলেঢালা সুতী কাপড় পড়াবেন। বাচ্চাকে অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গরমের সময় বাচ্চাদের চিকেন পক্সের প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই চিকেন পক্সের বেসরকারী টীকা দিয়ে নেয়া উত্তম।
গ্রীষ্মকালে নিয়মিত গোসলঃ এই গরমে বাচ্চাকে অবশ্যই প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। গরমে বাচ্চারা পানি নিয়ে খেলতে এবং লম্বা সময় গোসল করতে পছন্দ করে। খেয়াল রাখবেন যেন বাচ্চার গোসল বয়স ভেদে ৫-১৫ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়। গোসলের সময় নিয়মিত বেবী সোপ ব্যবহার করবেন এবং সপ্তাহে অন্তত ২ দিন চুলে শ্যাম্পু করবেন। ক্ষেত্র বিশেষে বেশি ধুলা বালির কারনে আরো অধিক প্রয়োজন হতে পারে। গোসলের পর খুব ভালভাবে চুল শুকাতে হবে। এই আর্দ্র পরিবেশে চুল শুকাতে দেরী হয় বিধায় এদিকে বিশেষ নজর দিবেন।
গরমে চুলের যত্নঃ গরমে ত্বকের মতই মাথার চামড়াতেও র্যাশ, ফুশকুরি এবং চুলের গোড়ায় ধুলো জমে ফলিকুলাইটিস হতে পারে। এজন্য নিয়মিত গোসল এবং সপ্তাহে ২ দিন শ্যাম্পু করাবেন। মাথা পরিষ্কার রাখবেন। গরমের সময় বাচ্চাদের চুল ছোট করে দেয়া উত্তম। প্রয়োজনে ছোট বাচ্চার চুল ফেলে দেয়া যেতে পারে।
গ্রীষ্মে পেটের পীড়া ও ডায়ারিয়াঃ গরমে বাচ্চাদের ডায়ারিয়ার সমস্যাও বেশি পরিলক্ষিত হয়। বাচ্চার পানির ব্যাপারে অধিক সচেতন হবেন। বাচ্চার হাত প্রতিনিয়ত পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে দিবেন। মাটি থেকে কিছু তুলে মুখে দিচ্ছে কিনা খেয়াল রাখবেন। নিয়মিত ফ্লোর এবং টেবিল এন্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করবেন, এতে বাসায় মাছি কমে যাবে। এছাড়া তেলাপোকা থাকলে কার্যকরী ব্যবস্থা নিবেন। খালি পায়ে টয়লেটে যাওয়া রোধ করবেন। ডায়ারিয়া হয়ে গেলে পানিশূন্যতা রোধে অধিক পরিমাণ তরল এবং ওরস্যালাইন খাওয়াবেন। ডায়ারিয়া প্রতিরোধ ও প্রতিকারে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ডায়ারিয়া - আমাশয় আর্টিকেল পড়বেন।
গরমে বাচ্চার গায়ে তেল মালিশঃ গ্রীষ্মকালে বড় বাচ্চাদের শরীরে অহেতুক তেল মালিশ করার প্রয়োজন নেই। ২ বছরের নিচে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শুধু গোসলের পূর্বে তেল মালিশ করবেন। তবে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যেন তেল মালিশের পর সাবান দিয়ে গোসল করানো হয়। অহেতুক বাচ্চাদের শরীরে তেল মালিশ করলে বাচ্চারা আরো অধিক গরমে কষ্ট পাবে এবং এই তেলে ধুলো আটকে ত্বকের নানা রকম সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। একদম নবজাতক বাচ্চা এবং ৬ মাসের নিচের শিশুদের ত্বকের শুষ্কতা বুঝে অলিভ ওয়েল দিতে পারবেন। তবে সরিষার তেল অবশ্যই পরিহার করতে হবে, কারণ সরিষার তেল শরীর গরম করে।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556 (দুপুর ৩ টায়)
সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল
২৩/৬, রুপায়ন শেলফোর্ড, লেভেল ৮, শ্যামলী। (শিশু মেলার বিপরীতে)
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 09642400300
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd