দাঁতের যত্নের সবটা আসলে লিখে বোঝানো সম্ভব না। খুঁটিনাটি অনেক বিষয় বোঝানোর আছে, হাতে কলমেও শেখার আছে। আবার একেক বাচ্চার অবস্থা দেখে কিছু বিশেষ পরামর্শও দেওয়ার দরকার হয়। এখানে যত্নের ব্যাপারে একেবারে সাধারণ, মৌলিক কিছু তথ্য তুলে ধরছি। দাঁতের যত্ন বলতেই মাথায় আসে শুধু দাঁত ব্রাশ করার কথা। কিন্তু না, সেটা তো করবেন দাঁত ওঠার পর। শিশুর দাঁতের যত্ন শুরু করতে হয় তার জন্মেরও আগে -
তার মায়ের দাঁত মুখ রোগমুক্ত রাখার মাধ্যমে ,
তার মায়ের খাবারের মাধ্যমে তার দাঁত মুখ গঠনের জন্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করার মাধ্যমে।
দাঁত মুখ পরিষ্কার করা:
শিশুর জন্মের পর তার মুখে দাঁত না থাকলেও মুখের যত্ন নিতে হয়। পরিষ্কার গজ হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে পানি চেপে ফেলে গজটা আঙুলে পেঁচিয়ে শিশুর মুখের ভেতরটা পুরো পরিষ্কার করে দিতে হবে।
এরপর শিশুর প্রথম দাঁত বের হলে চলে যেতে হবে প্রথম ডেন্টাল চেকআপে। আর এই সময় থেকেই শুরু হবে দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করা, রাতে ঘুমানোর আগে আর সকালে নাশতা করার ২০ মিনিট পর। ব্রাশ করার সঠিক পদ্ধতি চেকআপের সময় ডেন্টাল সার্জনের কাছ থেকে দেখে নিতে হবে।
১২ মাস পূর্ণ হয়ে গেলে দাঁতের যত্নে যোগ হবে বেবি টুথপেস্ট।
৬ বছর পূর্ণ হয়ে গেলে শিশু বড়দের টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারবে।
খাদ্যাভ্যাস:
বাচ্চা এক বা দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করছে, খুব যত্ন হচ্ছে ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি। ওদিকে তার দৈনন্দিন খাবার জুড়ে সুজি, মিছরি, চিনি, পাউরুটি, বিস্কিট, কেক! বাইরে গেলেই কিনে দেওয়া হচ্ছে চকলেট, ক্যান্ডি, আইসক্রিম, জুস, এমনকি সফট ড্রিংকস! এভাবে হয় না আসলে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো দাঁত, মুখকেও সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস জরুরি।
বদভ্যাস: কিছু খারাপ ও ক্ষতিকর অভ্যাস আছে যা শিশুর দাঁত, মুখ, চোয়ালের ক্ষতি করে। এগুলো প্রতিরোধ করা-ও দাঁতের যত্নের অন্তর্ভুক্ত। খারাপ অভ্যাসগুলো হলো -
শিশু "কিছু খায় না", তাই ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে ফিডার দিয়ে দুধ, এটা সেটা মেশানো দুধ, মিছরি পানি, সিরিয়াল, জুস, সুজি ইত্যাদি গেলানো।
শিশু ঘুমের মাঝে জেগে গেলে তাকে সুজি, বিস্কিট, কেক এই ধরণের শর্করা, চিনিযুক্ত, আঠালো খাবার খাওয়ানো।
১৮ মাস বয়সের পরেও ফিডার ব্যবহার, ৩ বছরের পরেও পেসিফায়ার ব্যবহার।
৪ বছর বয়সের পরেও আঙুল চোষা। (এটা আলাদা লিখেছি কারণ ৩-৪ মাস বয়সে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের একটা অংশ হিসেবে এটা শুরু হয় এবং নিজ থেকে চলেও যায়। কিন্তু ৪ বছরের পরেও এই অভ্যাস থেকে গেলে সেটা ক্ষতিকর এবং বদভ্যাস)
দাঁত দিয়ে নখ কাটা। দাঁত দিয়ে বোতলের ঢাকনা খোলা, প্যাকেটের মুখ ছেঁড়া।
ডেন্টাল চেকআপ: দাঁতের সঠিক যত্নের একেবারে অবিচ্ছেদ্য কিন্তু সবচেয়ে অবহেলিত অংশ এটি। ডেন্টাল সার্জনের কাছে গিয়ে দাঁত মুখের চেকআপ করানো কেনো দরকার, কবে থেকে শুরু করতে হয়, ইত্যাদি আগে একটি পোস্টে লিখেছি তাই এখানে আর বিস্তারিত লিখবো না। ডেন্টাল চেকআপ আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন
© ডা. ইফফাত সামরিন মুনা, ডেন্টাল সার্জন।