১। সাধারণ ডেংগু জ্বর (গ্রুপ-এ) - বাসায় চিকিৎসা
২। ওয়ার্নিং সাইন সহ ডেংগু (গ্রুপ-বি) - হাসপাতালে চিকিৎসা
৩। সিভিয়ার ডেংগু (গ্রুপ-সি) - ইমার্জেন্সী চিকিৎসা
সাধারণ ডেংগু জ্বর (গ্রুপ-এ) এর লক্ষণ সমূহঃ
জ্বরঃ সাধারণত ডেংগুতে উচ্চ মাত্রার জ্বর খেয়াল করা যেতো। কিন্তু ইদানীং খুব হালকা জ্বর নিয়েও ডেংগু পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত ডেংগুতে জ্বর ২-৭ দিন হয়ে থাকে।
মাথা ব্যাথা
মাংস পেশিতে ব্যাথা
হাড়ে ব্যাথা
শরীরে র্যাশ
বমি, পাতলা পায়খানা
সিবিসি পরীক্ষায় WBC ৫০০০ এর কম এবং প্লাটিলেট দেড় লক্ষের কম হওয়া।
NS1 পজেটিভ হওয়া মানে ডেংগু। কিন্তু NS1 নেগেটিভ হওয়া মানে এটা কনফার্ম নয় যে ডেংগু হয়নি। ডেংগু জ্বর শুরুর ২৪ ঘন্টা থেকে ৯৬ ঘন্টার মধ্যে ৬৫-৮৫% রোগীর NS1 পজেটিভ পাওয়া যায়। বাকি ১৫-৩৫% রোগীর ডেংগু হওয়া সত্বেও NS1 নেগেটিভ হতে পারে। ৯৬ ঘন্টা (৪ দিন) পর NS1 সাধারণত আর পজেটিভ পাওয়া যায়না।
IgG, IgM টেষ্টঃ সাধারণত ৪র্থ দিন থেকে রক্তে NS1 বিলীন হতে থাকে এবং ৭ম-৮ম দিন থেকে IgG, IgM পজেটিভ হতে শুরু করে।
হেমাটোক্রিট (HCT) ৫-১০% এর বেশি বৃদ্ধি না হওয়া
ওয়ার্নিং সাইন (গ্রুপ-বি): উপড়ের উপসর্গ গুলোর সাথে নিন্মের উপসর্গ যুক্ত হলে গ্রুপ-বি রোগী। সেক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
তীব্র পেট ব্যাথা
ক্রমাগত বমি
ক্রমাগত পাতলা পায়খানা
হাতে, পায়ে, পেটে, ফুসফুসে পানি জমা
শরীরের কোন অংশ থেকে রক্তপাতঃ যেমন নাক, কান, মুখ, ঠোট, মলদ্বার, চোখ ইত্যাদি।
নিস্তেজ হয়ে যাওয়া বা অত্যাধিক ছটফট করা
লিভার (যকৃত) বড় হয়ে যাওয়া > 2 সেমি
রক্ত পরীক্ষায় হেমাটোক্রিট (HCT) ২০% বেড়ে যাওয়া
ক্রমাগত প্লাটিলেট কমতে থাকা এবং ১ লক্ষের নিচে চলে আসা
রক্তের এলবুমিন কমে যাওয়া < 3.5 gm/dl
ডাক্তার পরীক্ষার সময় পেতে পারেনঃ হাত-পা একদম ঠান্ডা, ক্যাপেলারি রিফিল টাইম > ২ সেকেন্ড, দূর্বল পালস, প্রেশার কমে যাওয়া, ন্যারো পালস প্রেশার (<20)।
ডেংগু আক্রান্ত রোগীর অন্য রোগ (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের রোগ, প্রেগনেন্ট, দূর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, থ্যালাসেমিয়া বা রক্তের রোগ, স্টেরয়েড চলমান ইত্যাদি) থাকে বা অনেক ছোট বাচ্চা বা অনেক বয়ষ্ক রোগী হোন তবে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।
সিভিয়ার ডেংগু (গ্রুপ-সি)
মারাত্মক প্লাজমা লিকেজ হয়ে রোগী শকে চলে যাওয়া বা ফুসফুসে পানি জমে শ্বাসকষ্ট হওয়া।
মারাত্বক রক্ত ক্ষরণ হওয়া
লিভার / ব্রেন / হার্ট বা অন্য মেজর অর্গান ইনভল্ভ হওয়াঃ লিভারের ক্ষেত্রে AST / ALT >1000। ব্রেনের ক্ষেত্রে জ্ঞান কমে যাওয়া।
মেটাবলিক / ইলেকট্রোলাইট ব্যাপক ভাবে এলোমেলো হওয়া।
মশার কামড় রোধ করতে হবে। আগে ডেংগু মশা শুধু দিনের বেলা বা উচ্চ আলোতে কামড়াতো। কিন্তু ইদানীং যে কোন সময় কামরাতে দেখা যাচ্ছে।
বাসার আশেপাশে পানি জমে থাকছে কিনা খেয়াল করুন এবং প্রতি ৩ দিন অন্তর পানি ফেলে দিন। আগে ডেংগু মশা শুধু পরিষ্কার পানিতেই ডিম পাড়তো। কিন্তু ইদানিং অপরিষ্কার পানিতেও ডেংগুর ডিম পাওয়া যাচ্ছে।
ফুল হাতা জামা ও প্যান্ট পরিধান করতে পারেন।
ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন।
দিনের বেলা মশা রোধী রিপিলেন্ট (ওডোমস ক্রিম / ফেব্রিক রোল অন বা অন্য মশা রোধী লোশন বা রিপিলেন্ট) ব্যবহার করুন। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৪মাস+ বয়স থেকে মশা রোধী রিপিলেন্ট ব্যবহার করতে পারবেন।
সাধারণ ডেংগু জ্বরে আক্রান্ত হলে বাসায় বিশ্রামে থাকতে হবে। প্রচুর পানি, তরল খেতে হবে। এডাল্টের ক্ষেত্রে ২-৩ লিটার। বাচ্চার ক্ষেত্রে ৫০-৭০ মিলি প্রতি কেজি হিসাবে তরল খাওয়াতে হবে। তরলের মধ্যে দুধ, ফলের জুস, ওরস্যালাইন, রাইস স্যালাইন, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়া যাবে।
প্যারাসিটামল খেতে হবে জ্বরের প্রোকোপ বুঝে ৪-৬ ঘন্টা পরপর। বাচ্চাদের প্যারাসিটামলের ডোজ অন্য আর্টিকেলে বিস্তারিত দেয়া আছে। এডাল্টের ক্ষেত্রে ৫০০ মিলিগ্রাম করে সর্বোচ্চ ৪ ঘন্টা পর পর খাওয়া যাবে।
ডেংগু জ্বরে আক্রান্ত রোগী অবশ্যই অবশ্যই কোন ব্যাথার ঔষধ খেতে পারবেন না। এতে রক্তপাতের সম্ভাবনা বাড়ে।
প্রস্রাবের পরিমাণ খেয়াল রাখবেন। স্বাভাবিক ভাবে নূন্যতম দৈনিক ৪ বার প্রস্রাব হবে।
ডেংগু সিজনে যে কোন জ্বরে ডেংগু সন্দেহ করতে হবে এবং ৩য় দিন ডেংগু পরীক্ষা (CBC, NS1) করতে হবে।
টেষ্ট রিপোর্ট ভালো থাকলে পরবর্তীতে আর পরীক্ষা না করলেও হয়। তবে এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই একজন কোয়ালিফাইড ডাক্তার দেখিয়ে কনফার্ম করবেন।
সাধারণ ডেংগু জ্বরে কোন ক্রিটিক্যাল ফেইজ নাই। তবে ডেংগু হেমোরেজিক জ্বরের ক্ষেত্রে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পরের ২ দিন ঝুকি পুর্ণ। তাই এক্ষেত্রে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার দিন ফলোয়াপ রক্ত পরীক্ষা করা উচিত।
এডিস মশা (হাত/পায়ে ডোরা কাটা) কামড়ালেই ডেংগু হয়ে গেলো ব্যাপারটা এমন নয়। আপনাকে কামড়ানো এডিস মশাটি যদি ডেংগু জীবাণূ পরিবহণ করে শুধু তবেই আপনার ডেংগু হবে।
ডেংগুকে ভয় না পেয়ে সচেতনতাই পারে ডেংগু থেকে আপনার রোগীকে সেইফ করতে। তাই ডেঙ্গুকে বিস্তারিত জানুন এবং কোন ঝুকি (ওয়ার্নিং সাইন) খেয়াল করলে হাসপাতালে ভর্তি করুন।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556 (দুপুর ৩ টায়)
সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল
২৩/৬, রুপায়ন শেলফোর্ড, লেভেল ৮, শ্যামলী। (শিশু মেলার বিপরীতে)
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 09642400300
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd