বাচ্চা খেতে চায়না সমস্যাটা বয়স ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। যদি ৬-৯ মাসের বাচ্চা খেতে না চায় তবে প্রথমেই চিন্তা করতে হবে বাচ্চা খাওয়া শিখেছে কিনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটা খাওয়া না শিখার সমস্যা। এরকম বাচ্চা খাবার জন্য প্রস্তুত কিনা সেটা আগে বিবেচনা করতে হবে।
বাচ্চা খাবারের জন্য প্রস্তুত তার লক্ষণঃ
বাচ্চা সাপোর্ট দিয়ে বসতে পারবে।
ঘাড় শক্ত হবে এবং ঘাড়ের কন্ট্রোল আসবে।
অন্যের খাবারের দিকে তাকাবে এবং নিজের দিকে টানবে।
চামচ থেকে কিছুটা হলেও খাবার নিতে পারবে।
খাবার দেয়া হলে জিহবা দিয়ে ঠেলে বের করে দিবে না।
খাওয়া শিখানোর জন্য কিছু পরামর্শঃ
ভিন্ন ভিন্ন টেক্সার ও রঙ এর খাবার বাচ্চাকে দিতে হবে। এসব রঙ এবং টেক্সচার বাচ্চাদের আকর্ষণ করে।
একদম শুরুতে বাচ্চা খাবে দিনে ১-২ বার, ১-২ টেবিল চামচ। ধীরে ধীরে ২-৩ সপ্তাহে পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৪-৫ টেবিল চামচ।
আপনার দেয়া খাবার বাচ্চার পছন্দ নাও হতে পারে। বাচ্চা না খেলে দানাদান খাবার দিয়ে থাকলে চেঞ্জ করে স্মুথ খাবার ট্রাই করুন।
না খেলে স্বাদ যেটা দিচ্ছেন সেটা চেঞ্জ করুন। লবণ ছাড়া খাবার না খেলে সামান্য লবণ দিয়ে দেখুন।
অনেক বাচ্চা মিষ্টি পছন্দ করে। তাদের খাবার মিষ্টি করার জন্য খেজুর, কিসমিস এসব ব্যবহার করতে পারেন। চিনি বা মিসরি রিকমেন্ডেড না হলেও কিছু দিনের জন্য দিয়ে দেখতে পারেন বাচ্চা পছন্দ করে কিনা।
ফল বা ফলের রস ট্রাই করতে পারেন।
ধৈর্য ধরতে হবে, লেগে থাকতে হবে।
আপনি কোন খাবার পছন্দ করেন না, মনে করবেন না আপনার বাচ্চাও সেটা অপছন্দ করবে। হতে পারে সেটাই তার প্রিয় খাবার!
কোন খাবার একবার দিয়ে না খেলে বাদ দিয়ে দিবেন না। নুন্যতম ১০-১৫ বার সেই খাবারটা ট্রাই করুন। নতুন স্বাদ অনেক সময় বাচ্চারা রিজেক্ট করে।
হোম ফুড বাচ্চা একেবারেই না নিলে কমার্শিয়াল খাবার চেষ্টা করতে পারেন। অনেক বাচ্চাই সেরেলাক বা কর্ন ফ্লেক্স পছন্দ করে খায়। এসব দিয়ে খাওয়া শিখানো হয়ে গেলে কিছু দিন পর এ জাতীয় খাবার পরিবর্তন করে বাসায় তৈরী খাবারে অভ্যস্থ করতে হবে।
বাচ্চাকে খাবার শেখানোর সময় বুকের দুধ দেয়ার পর বা দুইবার বুকের দুধ খাওয়ানোর মাঝে বাচ্চাকে সলিড অফার করুন। যেটা ৭-৮ মাসে গিয়ে উলটে যাবে। তখন সলিড খাওয়ানোর নির্দিষ্ট সময়ে তাকে সলিড খাওয়াবেন এবং সলিড খাবার পর বাচ্চার দুধের চাহিদা থাকলে দিবেন।
বাচ্চাকে খাওয়া শেখানোর সময় একদিনে একটা নতুন খাবারই অফার করবেন। অনেক নতুন খাবার একসাথে অফার করবেন না।
৭ মাস+ বাচ্চার খাবারের কিছু পরামর্শ:
এই বয়সের বাচ্চা দিনে ২ টি প্রধান মিল ও ২ টি নাস্তা করবে।
খাওয়ানোর সময় বাচ্চার দিকে তাকিয়ে হাসুন।
খাবার সময়কে স্ট্রেসে পরিণত করবেন না।
খুব তাড়াহুড়া করবেন না। ধীরে ও অল্প করে খাওয়ান।
বাচ্চা খাচ্ছে না সেই বিরক্তি প্রকাশ করবেন না।
অল্প খাওয়ার পর আর নিচ্ছে না, সিপারে পানি অফার করুন।
বোতলে / ফিডারে সলিড দিবেন না।
খাবারের এলার্জি প্রতিরোধ করতে ১ বছরের আগেই বাচ্চাকে কমন এলার্জিক খাবার গুলো দিবেন। ডিম, মাছ, বাদাম, গম ইত্যাদি।
দাত না থাকলেও ৬-৯ মাসের মধ্যে কোন এক সময় বাচ্চা চিবাতে শিখে যায়। বাচ্চাকে চিবানো শেখার মত খাবার দিতে হবে। যেমনঃ ছোট টুকরা মাংস, সবজি, ফল ইত্যাদি।
মিল বা স্ন্যাকস টাইমের আগে দুধ খাওয়াবেন না। খাবার/স্ন্যাকস খাওয়ানো শেষে চাহিদা মত দুকের দুধ খাওয়াবেন।
বিভিন্ন বর্ণ এবং গঠনের ২-৩ টা ভিন্ন খাবার প্রতি মিলে রাখার চেষ্টা করবেন।
বাচ্চা নিজে খেতে পারে এরকম ফিংগার ফুড রাখতে হবে।
বাচ্চারা খাবার নিয়ে নষ্ট করবে, মাখাবে, গায়ে / শরীরে / কাপড়ে লাগাবে। কিছু খাবে কিছু ফেলবে। এসবই এলাউ করবেন। এটাই ধীরে ধীরে তাদের নিজে নিজে খাওয়া শেখার ব্যাপারে স্বাধীন করে তুলবে।
বাচ্চাদের পরিবারের সাথে খেতে বসান। বাচ্চারা দেখে দেখে শিখে।
বাচ্চাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খান। অভিনয় করুন খুব মজা হয়েছে।
কখন বুঝবেন বাচ্চার খাওয়া শেষ?
বাচ্চা মাথা ঘুরিয়ে নিবে বা অন্য দিকে তাকাবে।
মুখ বন্ধ করে রাখবে বা খাবার মুখ থেকে বের করে দিবে।
মাথা নাড়িয়ে না করবে।
খাওয়ার গতি অতি ধীর হয়ে যাবে।
১ বছর+ বাচ্চার খাবারের কিছু পরামর্শ:
১ বছর থেকে বাচ্চা ৩ বেলা প্রধান খাবার খাবে, এছাড়া ২ বেলা নাস্তা করবে। খাবার সময় হবে নির্দিষ্ট।
বাচ্চা খাবার নিয়ে খেলবে, ছুড়বে। এটা বাচ্চার বিকাশেরই অংশ।
এই বয়সে বাচ্চা কোন খাবার পছন্দ করে বা ত্যাগ করে তার খাবারের ব্যাপারে স্বাধীনতা প্রকাশ করতে চায়।
বাচ্চা প্রতিদিন একই পরিমাণ খাবে না। একদিন বা এক বেলায় কম খেলে সে নিজেই অন্যদিন বা অন্য বেলায় সেটা পুষিয়ে নিবে।
বাবা-মা হিসাবে আপনার কাজ হবে বাচ্চাকে পুষ্টিকর খাবার দেয়া এবং কখন, কি এবং কোথায় খাবে সেটা ঠিক করে দেয়া।
বাচ্চাকে ব্যালেন্সড খাবার দেয়ার চেষ্টা করবেন। শুধু শর্করা বা আমিষ নয়। খেয়াল রাখবেন শর্করা, আমিষ, ফ্যাট এবং মিনারেলস সঠিক ভাবে দেয়া হচ্ছে কিনা।
সব সময় খাবার অল্প পরিমানে নিবেন। বাচ্চা আরো খেলে সে সেটা প্রকাশ করতে পারে। প্রথমেই অনেক খাবার নিয়ে বাচ্চাকে ভয় পাইয়ে দিবেন না।
এই বয়সে বাচ্চা পারিবারিক খাবার খাবে এবং পারিবারিক খাবারই বাচ্চাদের মত করে তৈরী করে দিতে হবে।
বাচ্চাকে পারিবারিক খাবারে সবার সাথে অংশগ্রহণ করাবেন।
দেয়ার আগেই ভেবে নিবেন না বাচ্চা এটা অপছন্দ করবে।
পানি প্রধান পানীয়। চিনি যুক্ত পানীয় যেমন ফলের জুস, কোক, সফট ড্রিংক্স ইত্যাদি পরিহার করবেন।
১-২ বছর বয়সে খেয়াল রাখতে হবে খুব বেশি দুধ যেন না খায়। এই বয়সে ৩-৪ বার বুকের দুধ বা ৪০০-৫০০ মিলি ফর্মুলা খাবে। এর বেশি দুধ খেলে সেটা সলিড খাবার চাহিদা কমিয়ে দিবে।
সারাদিন এটা সেটা খাওয়া অবশ্যই পরিহার করতে হবে। যে বাচ্চা সারাদিন এটা সেটা খাবে সে কখনই প্রধান খাবার ঠিক ভাবে খাবে না।
বাচ্চারা সাধারণত খেলায় ব্যস্ত থাকে। তাই হুট করে ধরে না এনে খাবারের নির্দিষ্ট সময়ের ৫ মিনিট আগে থেকে বাচ্চাকে জানান।
খাবারের জন্য খুব বেশি সময় অতিবাহিত করবেন না। একটা প্রধান খাবারের সময় হবে ৩০-৩৫ মিনিট।
বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় পজেটিভ, হাসিখুশি এবং শান্ত থাকুন। আপনার বকা-ঝকা কিংবা মেজাজ বাচ্চার জন্য অতিরিক্ত চাপ।
কখনও জোর করে খাওয়াবেন না।
এটা খেলে ওটা পুরষ্কার দিব, এরকম প্রলোভন দেখাবেন না।
বাচ্চাকে খাবার তৈরীতে যুক্ত করুন। যেমনঃ চলো ডিম ভেজে নিয়ে আসি।
১ বছর থেকেই বাচ্চা সিপার বাদ দিয়ে কাপে পানি খাবে। বাচ্চাকে বুঝাতে হবে সে বড় হয়ে গেছে এখন আর ফিডার বা সিপার নয়।
বাচ্চাকে টিভি, মোবাইল দেখিয়ে খাওয়াবেন না।
আপনার বাচ্চা খেতে চায়না? লক্ষ্য করুন-
বাচ্চার ওজন এবং গ্রোথ ঠিক আছে কিনা?
শিশু বিকাশের মাইলফলক গুলো ঠিক আছে কিনা?
যদি ঠিক থাকে তবে অহেতুক চিন্তা করবেন না। বাবা-মা সাধারণত যতটা আশা করে বাচ্চাদের প্রয়োজন তার থেকে অনেক কম।
বাচ্চা খাচ্ছে না, কি কারন হতে পারে?
বাচ্চা ক্ষুধার্ত নয়।
সে খুবই ক্লান্ত।
শরীর ভালো না।
খাবার পছন্দ হয়নি।
সে ব্যস্ত, অন্য কাজ বা খেলা আছে তার।
না খেয়ে সে তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেখাচ্ছে।
বাবা-মা তাকে খাবার নিয়ে বেশি বিরক্ত করছে।
কিছু সাধারণ ভুল যেটা আমরা করিঃ
জোর করে খাওয়ানো।
বাচ্চাকে জিজ্ঞাস করা সে কি খেতে চায়।
একটা না খেলে সাথে সাথেই অন্য কিছু বানিয়ে দেয়া।
নিজেদের বিরক্তি, মেজাজ ও রাগ প্রকাশ করা।
ভাত খেলে চকোলেট দেয়া হবে প্রলোভন দেখানো।
বেশি দুধ খাওয়া এলাউ করা।
বাচ্চার সারা দিন এটা সেটা খাওয়া এলাউ করা।
বাচ্চার খাবার নিয়ে অতি টেনশন ও অতি এটেনশন দেয়া।
বাচ্চাকে পারিবারিক খাবারের সময় সাথে না নেয়া।
বাচ্চার পিছনে দৌড়ে দৌড়ে খাওয়ানো।
টিভি, মোবাইল দেখে দেখে খাওয়ানো।
বাচ্চার অরুচি এবং খেতে না চাওয়া কোন অসুস্থতার অংশ নয়তো?
বাচ্চা খেতে না চাইলে বা খাওয়ায় অরুচি হলে পজেটিভ ভাবে খাওয়ানোর চেষ্টা করার সাথে সাথে এটাও চিন্তা করতে হবে বাচ্চার কোন সমস্যা হলো কিনা। কিছু খুবই কমন সমস্যাঃ
ওরাল থ্রাস বা মুখের ভিতর সাদা কাই
ডায়ারিয়া বা বমির কারণে মিনারেল লস
বাচ্চা অসুস্থ বা কিছু দিনের মধ্যে অসুস্থ হয়েছে।
বাচ্চার পেটে কৃমি।
কিছু ঔষধ বিশেষ করে এন্টিবায়টিক অরুচি করে। তেমন কোন এন্টিবায়টিক খাচ্ছে।
বাচ্চার কোন ধরনের রক্ত স্বল্পতা রয়েছে।
বাচ্চার শরীরে ভিটামিন বা মিনারেল স্বল্পতা রয়েছে।
বাচ্চা কোন দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছে।
বাচ্চার অরুচি হলে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। উপড়ের বিষয় গুলো পর্যালোচনা করে বাচ্চার অরুচির কারণ বের করে সমাধান করতে হবে।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556 (দুপুর ৩ টায়)
সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল
২৩/৬, রুপায়ন শেলফোর্ড, লেভেল ৮, শ্যামলী। (শিশু মেলার বিপরীতে)
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 09642400300
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd