চলুন জেনে নেই কোষ্ঠকাঠিন্য কখন বলব?
• সপ্তাহে ২ বার বা তার কম পায়খানা
• পায়খানার সময় কষ্ট হয় এবং কান্না করে
• যদি অনেক মোটা মল ত্যাগ করে
• পায়খানার নালী শক্ত পায়খানা দিয়ে ভর্তি থাকে
উপড়ের সমস্যা গুলো যে কোন ২ টা থাকলে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।
কারণ:
কোষ্ঠকাঠিন্যতার কারণ গুলোকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
১) অভ্যাসগত সমস্যা:
• খাদ্য অভ্যাস জনিতঃ ফাষ্ট ফুড, জাংক ফুড, চকোলেট ইত্যাদি। কিছু বাচ্চার গরুর দুধ বা ফর্মুলার কারণে হতে পারে। শাক সবজি, ফলমূল, পানি কম খেলে হতে পারে। পোলাও চাল, কলা, সুজি, সাগু, ব্লেন্ড করা খাবার, সেরেলাক খাওয়ানো ইত্যাদি।
• খেলাধুলা, টিভি, মোবাইল গেমস বা অন্য টপিকে মেতে থাকলে পায়খানা করতে চায়না। ফলে সেটা জমতে থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যতা হয়।
• পরিবেশ পরিবর্তন যেমন কোথায় ঘুরতে গেলে বা স্কুলে গেলে হতে পারে।
• ফ্যামেলি বা জেনেটিক সমস্যা। ইডিওপেথিক বা অজানা কারণ।
২) শাররীক সমস্যা:
কিছু রোগের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে সে বিষয় গুলো খেয়াল রাখতে হবেঃ
যদি বাচ্চার জন্মের পর প্রথম কালো পায়খানা ৪৮ ঘন্টার পর হয় তবে হাসপ্রাংস ডিজিজের সম্ভাবনা আছে।
বাচ্চার পেট ফোলা, বাচ্চার মুখমন্ডল বড়-ফোলা থাকে, জন্মের পর অনেক দিন জন্ডিস থাকে, জিহবা বের করে থাকে, মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা পড়ে, মায়ের হাইপো থায়রয়েড থাকে তাহলে হাইপো-থায়রয়েড সাসপেকটেড। অবশ্যই থায়রয়েড টেষ্ট করতে হবে।
পায়খানা করার সময় বাচ্চা কান্না করে (এনাল ফিশার)
পায়খানার রাস্তা জন্মগত ভাবে সরু
মলদ্বার স্বাভাবিক জয়গার থেকে কিছুটা সামনে থাকা
ডাউনস সিন্ড্রোমঃ শরীর খুব তুলতুলে, জিহবা একটু বের হয়ে থাকার প্রবণতা, গলা ছোট, মুখমন্ডল-কান অপেক্ষাকৃত ছোট, কানে কম শোনা, কথা বলতে দেরী হওয়া, বুদ্ধি কম থাকা, মানসিক ও শাররীক বিকাশে দেরী হওয়া ইত্যাদি। সাথে বেশি বয়সে (৪০ বছর এর কাছাকাছি) বাচ্চা হওয়ার হিস্ট্রি থাকতে পারে।
অন্যান্যঃ
আয়রন সাপ্টিমেন্টেশন
অত্যাধিক ভিটামিন খাওয়া
ক্যালসিয়াম স্বল্পতা
খেয়াল করুনঃ
বাচ্চা শুধু বুকের দুধ খেলে ২-৩ দিন পর পর পায়খানা হতে পারে, যেটা স্বাভাবিক। যেসব বাচ্চা ফর্মুলা খায় তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য ফর্মুলার কারণে হতে পারে। কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে ফর্মুলার ব্রান্ড পরিবর্তন সমস্যা কমিয়ে আনতে পারে। তাই ফর্মুলা খাওয়া বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য হলে অন্য ব্রান্ডের ফর্মুলা ট্রাই করে দেখবেন। সব থেকে ভালো হয় ফর্মুলা না দিয়ে শুধু বুকের দুধ দিতে পারলে।
প্রাথমিক করণীয়ঃ
২-৩ দিন পায়খানা না হলে এবং বাচ্চার কষ্ট হলে Supp. glysup 1.15gm বয়স অনুযায়ী ১-২ টা দিতে পারবেন। খেয়াল রাখবেন, ঢোকানোর সময় বেশি জোড় বা চাপ দিবেন না। প্রয়োজনে কিছুটা জেসোকেইন জেল লাগিয়ে নিতে পারেন। বেশি জোড়াজোড়ি করলে এন্যাল ফিশার হতে পারে।
ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে ড্রপ ওমিডন বয়স অনুসারে ৩ বেলা শুরু করবেন। ১-৫ মাসে ১ মিলি করে ৩ বেলা, ৬-১২ মাস বয়সে ১.৫ মিলি করে ৩ বেলা, ১-২ বছর বয়সে ২ মিলি করে ৩ বেলা ১ মাস দেয়া যাবে।
গ্যাসের সমস্যা থাকলে ফ্লাকল ড্রপ ১-৩ মাসে ০.৩ মিলি, ৪-৬ মাসে ০.৫ মিলি, ১-২ বছর বয়সে ১ মিলি করে ৩-৪ বেলা ১ মাসের জন্য দেয়া যাবে।
তবে ২-৩ দিন পায়খানা হয়না, সাথে হলুদ সবুজ বমি হচ্ছে, পেট ফুলে আছে বা বমি দূরে গিয়ে পড়ছে এমন হলে দ্রুত ডাক্তার দেখাবেন।
প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে এতটুকু দেয়া হলো। এখানে পায়খানা নরম করার ঔষধ দেয়া হয়নি। প্রাথমিক এই চিকিৎসায় সমাধান না হলে পায়খানা নরম করার ঔষধ বা অন্য ঔষধ দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ৬-৭ মাস বয়স হয়ে গেলে এবং পারিবারিক খাবার শুরু হওয়ার পরও যদি সমস্যা চলতে থাকে তবে নিচের উপদেশ গুলো মেনে চলবেন।
লাইফস্টাইল মডিফিকেশনঃ
বেশি পরিমাণে পানি খেতে হবে। ৬ মাসে ১৫০-১৮০ মিলি। ৯ মাসে ২৫০-৩০০ মিলি এবং ১২ মাসে ৫০০ মিলি পানি খাওয়াবেন (বুকের দুধ ছাড়া)। ১-২ বছরের বাচ্চা প্রতিদিন ৫০০ মিলি-১ লিটার পানি খাবে।
আশযুক্ত শাক-সবজি এবং ফল-মূল খেতে হবে। গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পেপে, টমেটো, শসা, ব্রকলি, পাতাকপি এসব সবজি এবং শাক প্রতিদিনের খাবারে অবশ্যই রাখবেন।
বাচ্চাকে অর্গানিক লাল চাল দিবেন। এই চালে প্রচুর ফাইবার থাকে যেটা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করবে।
বাচ্চাকে বয়স অনুযায়ী ১-২ চামচ সিয়া চিড এবং ইশুবগুলের ভুসি ২ বেলা খাওয়াবেন। এমনিতে না খেলে খাবারে মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে।
পরিহার করবেনঃ গরুর দুধ, ফর্মুলা, কলা, পোলাও চাল, ব্লেন্ড করা খাবার, হরলিক্স, সেরেলাক, গরুর মাংস ও কলিজা।
কম খাবেঃ মাংস, চিনি, সুজি, সাগু, চালের গুড়া, চকোলেট, জুস।
বেশি খাবেঃ সবজি (মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, শসা, গাজর, ব্রকলি, ফুলকপি, পাতা কফি, মূলা ইত্যাদি), শাক, ওটস, ফল, মাছ, ডাল, কিসমিস, লাল চাল, লাল আটা, পাকা পেপে, টকদই ইত্যাদি।
পরিবেশ পরিবর্তন হলে বাচ্চার পায়খানার দিকে নজর রাখতে হবে।
শারীরিক কোন সমস্যার জন্য কোষ্ঠকাঠিন্যতা হচ্ছে বলে মনে হলে অথবা খ্যাদ্য অভ্যাস মেনে চলার পরও কোষ্ঠকাঠিন্যতা ভাল না হলে অবশ্যই একজন শিশু ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
নিয়ম মানার পরও কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পায়খানা তরল করার ঔষধ দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের বাচ্চাদের নিয়মিত সকালের খাবারের পর ১০ মিনিটের জন্য টয়লেটে বসানোর অভ্যাস করা জরুরী। এভাবে নিয়মিত অভ্যাস করলে দেখা গেছে অনেকে সমস্যা কেটে যায়।
যদি বাচ্চার মলদ্বারে ব্যাথা থাকে অথবা শক্ত পায়খানার সাথে রক্ত লেগে থাকে তবে হতে পারে বাচ্চার এন্যাল ফিশার হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে ফিশারের চিকিৎসা প্রয়োজন হবে।
প্রয়োজনে বাচ্চাকে হিপ বাথ দিতে হবে। কুসুম গরম পানি একটা বোলে নিয়ে বাচ্চাকে বসিয়ে খেলতে দিতে হবে প্রতি বেলায় ১০-১৫ মিনিট করে ২ বেলা প্রতিদিন ১৫ দিনের জন্য। এতে মাংসপেশী রিলাক্স হবে এবং মলদ্বারে কোন ফাটা বা ঘা থাকলে সেটাও ভালো হবে।
পটি ট্রেনিং অবশ্যই ১৮ মাসের পূর্বে শুরু করা যাবে না, ভালো হয় ২ বছরের পর শুরু করলে। জোর পূর্বক পটি ট্রেনিং অনেক ক্ষেত্রেই কোষ্ঠকাঠিন্যতার কারণ হয়।
পটিতে বসার পজিশনঃ আগের দিনের লো কমোড পায়খানা করার জন্য সর্বোত্তম। লো কমোড না থাকলে বাচ্চাদের পটি বা হাই কমোডে সিটার দিয়ে বসাতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন ফুট রেষ্ট দিয়ে পায়ের পজিশন উপড়ে এমন ভাব এতুলে দিবেন যেন শরীরের সাথে পায়ের পজিশন ৩৫-৪৫ ডিগ্রী হয়। বিস্তারিত ছবিতে দেয়া আছে।
ছবিতে বর্ণিত নিয়মে পায়ের নিচে ফুট রেস্ট দিয়ে কমোডে বা পটিতে বসাবেন। যে বাচ্চা আধুনিক কমোড ব্যাতীত আগের দিনের লো-টয়লেট ব্যবহার করছে সেটা বেশি ভালো।
সকালে খাওয়ার পর ১০ মিনিট টয়লেটে বসিয়ে রাখবেন।
পটি ট্রেনিং ২ বছর থেকে শুরু করবেন। অবশ্যই ১৮ মাসের আগে নয়। আগে শুরু করলে ফল সরূপ কোষ্ঠকাঠিন্যতা হতে পারে।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556
সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল
২৩/৬, রুপায়ন শেলফোর্ড, লেভেল ৮, শ্যামলী। (শিশু মেলার বিপরীতে)
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 09642400300
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd