শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক হাই-ক্যালরী খাবার
অনেক বাবা-মা তার বাচ্চার ওজন বাড়ছে না কেন সেটা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এই আর্টিকেলে বাচ্চার ওজন বাড়াতে সহায়ক খাবার নিয়ে আলোচনা করবো। বাচ্চাকে খাবারের সাথে পরিচিত করার পর বাচ্চা খেতে শুরু করলে প্রথমেই লক্ষ্য রাখতে হবে বাচ্চার খাদ্য তালিকায় যথেষ্ট পুষ্টিকর খাবার দেয়া হচ্ছে কিনা। প্রধানত যেসব উপাদান নিশ্চিত করতে হবে সেগুলো হলোঃ আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিংক, প্রোটিন এবং চর্বি।
আয়রন যুক্ত খাবারঃ খাদ্যে আয়রনের প্রধান উৎসই হলো লাল মাংস যেমনঃ গরু, ছাগল ইত্যাদির মাংস, কলিজা এবং সামুদ্রিক মাছ। এছাড়া নন-প্রোটিন উৎস গুলো হলো বিভিন্ন সবজির বিচি, মসুর ডাল, লাল আটা, সবুজ শাক-সবজি, বাদাম, কিসমিস, খেজুর, ডিম এবং আয়রন ফর্টিফাইড সিরিয়াল। এছাড়া নন-প্রোটিন আয়রন শোষণের জন্য ভিটামিন-সি জরুরী। তাই একই সাথে ভিটামিন সি যুক্ত খাবারও দিতে হবে।
ভিটামিন সি এর ভালো সোর্সঃ কাচা মরিচ, ব্রকলি, আলু, পালং শাক, গাজর, কলা, টমেটো, স্ট্রবেরী, পেপে, পেয়ারা, সাইট্রাস ফল ইত্যাদি। এসব বাচ্চার খাবারে রাখার চেষ্টা করবেন।
ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারঃ ক্যালসিয়ামের সেরা উৎস দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার যেমন চিজ, দই ইত্যাদি। এছাড়া নন-প্রোটিন উৎস হলো বাদাম, সবুজ শাক-সবজি। ২ বছরের নিচের বাচ্চার জন্য বুকের দুধ যথেষ্ট। ২-৪ বছরের বাচ্চা প্রতিদিন ১ কাপ গরুর দুধ এবং ১০০-১৫০ গ্রাম দই বা ১-১.৫ স্লাইস চিজ খাবে। ৪ বছরের বড় বাচ্চা প্রতিদিন ১ গ্লাস দুধ, ২০০ গ্রাম দই এবং ২ স্লাইস চিজ খাবে ক্যালসিয়ামের ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্য। এছাড়া যথেষ্ট ভিটামিন-ডি পেতে প্রতিদিন অবশ্যই ১৫-২০ মিনিট বাচ্চাকে মৃদু নরম রোদে খেলতে দিতে হবে।
জিংক সমৃদ্ধ খাবারঃ শারিরীক শক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জিংক অপরিহার্য। জিংকের সব থেকে ভালো সোর্স মাংস, ডিম এবং দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার। এছাড়া অন্যান্য সোর্স হলোঃ লাল আটা, বাদাম এবং বিচি যুক্ত সবজি, ছোলা এবং মসুর ডাল।
চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় খাবারঃ ওজন বাড়াতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে চর্বি জাতীয় খাবার। এজন্য বাচ্চার খাবারে বেশি তেল, বাটার, ঘি যুক্ত করবেন। ডিম ভাজার জন্য তেলের পরিবর্তে বাটার ব্যবহার করতে পারেন। খাবারে চিজ এবং দই প্রতিদিন রাখবেন। স্ন্যাকস হিসাবে মিটবল, নাগেটস বাটার দিয়ে ভেজে দিতে পারেন। অন্যান্য খাবারে অনুসারে পিনাট বাটার বা ফুড ক্রিম যুক্ত করতে পারেন। বাচ্চার সকল খাবারে বাটার, ঘি, চিজ, ক্রিম ইত্যাদি সুযোগ মত যুক্ত করার চেষ্টা করবেন।
প্রোটিন খাবারঃ ওজন বৃদ্ধি ও দেহের সঠিক গ্রোথের জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন নিশ্চিত করতে হবে। প্রোটিন বা আমিষের সেরা সোর্স হলো মুরগী, গর-খাসির মাংস এবং মাছ। এছাড়া ডিম, ডাল এবং সবজির বিচিতে প্রোটিন আছে। অধিক ক্যালরী যুক্ত খাবার খাদ্য তালিকার রাখার চেষ্টা করবেন। যেমন চিংড়ী মাছ, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস (কিমা করে) ইত্যাদি। মুরগির মাংস বিভিন্ন উপায়ে দেয়া যায়। যেমন চিকেন ফ্রাই, রোষ্ট, চিকেন বল, চাইনিজ চিলি চিকেন বা সুইট এন্ড সাওয়ার চিকেন বল, ঝাল তরকারি ইত্যাদি। গরুর মাংস কিমা করে মিটবল, নাগেট ইত্যাদি বানিয়ে বাটারে ভেজে দিতে পারেন। মাছ রান্না ছাড়াও মাছের চপ, মাছের বল, কোপ্তা, মাছ ভাজা, প্রন বল, প্রন ফ্রাই, চিংড়ী মালাইকারী ইত্যাদি অনেক অপশন আছে।
ভ্যারিয়েশনঃ অবশ্যই খাবারে ভ্যারিয়েশন আনতে হবে। একই খাবার প্রতিদিন দেয়া যাবে না। বাচ্চাদের খাবার বিভিন্ন রঙ এবং টেক্সচারের হতে হবে যাতে সহজে বাচ্চাদের আকর্ষণ করে। সপ্তাহে ২ দিন মোরগ পোলাউ / ইলিশ পোলাউ / ফ্রাইড রাইস / ডিম বিরিয়ানী ইত্যাদি বাচ্চার পছন্দ অনুসারে রাখতে পারেন। অনেক বাচ্চা সুইট এন্ড সাওয়ার চিকেন বল, পর্ন বল ইত্যাদি পছন্দ করে থাকে, সপ্তাহে ২-১ দিন রাখতে পারেন। সকালের নাস্তা হিসাবে মাঝে মধ্যে জ্যাম, জেলি, নিউট্রেলা, পিনাট বাটার ইত্যাদি দিয়ে ব্রেড দিতে পারেন।
স্ন্যাকসঃ স্ন্যাকস হিসাবে সবজি ও ফল ছোট ছোট পিস করে দিতে হবে। সবজি বাটারে ভেজে পাকোরা হিসাবে দিতে পারেন। আলুর ফ্রেন্স ফ্রাই অনেক বাচ্চা পছন্দ করে। ফল এমনিতে খেতে না চাইলে কাষ্টার্ড বানিয়ে দিতে পারবেন। এছাড়া দই, চিজ খুবই উন্নত স্ন্যাকস। ডিম বিভিন্ন উপায়ে দেয়া যেতে পারে। বাটার বা ঘিয়ে ভেজে ডিম দেয়া যায়, ডিম বয়েল করে বা পোস করে দেয়া যায়। এছাড়া ডিমের সাথে পিনাট বাটার বা বাটার, মিয়োনেস ইত্যাদি ব্রেড দিয়ে স্যান্ডুইচ বানিয়ে দেয়া যায়। ছোলা খুবই ভালো নাস্তা হিসাবে। পাস্তা, পিজ্জা, নলুডস ইত্যাদিও সপ্তাহে ২-১ দিন রাখা যায়। স্বাদ চেঞ্জের জন্য সকালের স্ন্যাকস হিসাবে সপ্তাহে ২-১ দিন আয়রন ফর্টিফাইড সিরিয়াল / সেরেলাক / কর্ন ফ্লেক্স দেয়া যেতে পারে। ডেজার্ট হিসাবে ফিরনি, পায়েস, কাস্টার্ড ইত্যাদি রাখা যায়। মটরশুটি, শিমের বিচি আলাদা করে ভুনা করে বিকালের স্নাকস হিসাবে দিতে পারেন। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করতে হবে। কিসমিস, খেজুর, নানা পদের বাদাম বাচ্চার খাবারে নিয়মিত ভাবে রাখতে হবে।
সব কিছুর পর ওজন ঠিক মত না বাড়লে এবং বাচ্চার গ্রোথ বাধাগ্রস্থ হলে রোগের কথাও ভাবতে হবে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের সাহায্য নিবেন। এরকম বাচ্চার ফুল ইভালিউয়েশন লাগবে। চোখ, বুক, মুখের ভেতর দেখতে হবে। সাথে বিস্তারিত হিস্টোরি লাগবে। বাচ্চার বার বার ডায়ারিয়া থাকে কিনা, পায়খানার সমস্যা আছে কিনা, চামড়ার অবস্থা কেমন, কৃমি আছে কিনা, রক্ত স্বল্পতা / এনেমিয়া আছে কিনা, মুখের ভিতর সাদা কাই পড়েছে কিনা সব এসব বাচ্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সব দেখে প্রয়োজনীয় ঔষধ দিতে হবে।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556 (দুপুর ৩ টায়)
সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল
২৩/৬, রুপায়ন শেলফোর্ড, লেভেল ৮, শ্যামলী। (শিশু মেলার বিপরীতে)
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 09642400300
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd