বাচ্চা রাতে ঘুমায় না, সারা রাত কান্না করে, বাচ্চা মোচড়ায় এবং কান্না করে। এই উপসর্গ গুলো মায়ের জন্য বিভিষীকার মত। এই উপসর্গ গুলো আপনার বাচ্চার মধ্যে থাকলে বুঝতে হবে আপনার বাচ্চার ইনফেনটাইল কোলিক থাকতে পারে। এই সমস্যা সাধারণত ৩-৪ সপ্তাহে শুরু হয় এবং ৬ মাস পর কমতে শুরু করে বা একেবারে ভাল হয়ে যায়।
জানতে হবে এই সমস্যা গুলো কেন এবং কিভাবে হচ্ছে। এই সমস্যার প্রধান কারণ পেটে অতিরিক্ত গ্যাস। এই গ্যাস কিভাবে আসছে? যদি বুকের দুধ খাবার সময় বা ফিডার খাবার সময় বাচ্চা দুধের থেকে বেশি বাতাস খায় তবে সেই অতিরিক্ত গ্যাস বাচ্চার সমস্যার কারন হয়। বাচ্চা যদি বুকের দুধের ল্যাকটোজ সমৃদ্ধ অংশ বেশি খায় তবে দুধ হজম হয় না এবং এরকম সমস্যা হতে পারে। এই বিষয়ে বিস্তারিত ২ টি পোষ্ট রয়েছে গ্রুপের ব্রেষ্ট ফিডিং টপিকে। অবশ্যই পড়ে নিবেন। বাচ্চা যদি ফর্মুলা খায় তবে বাচ্চার এই সমস্যার একটা কারণ হতে পারে গরুর দুধ বা ফর্মুলায় থাকা ল্যাকটোজ এ ইনটলারেন্স বা এলার্জি। এছাড়া বাচ্চার মা যদি গরুর দুধ খায় সেটার সামান্য পরিমাণ বুকের দুধের মাধ্যমে বাচ্চার কাছে গিয়ে ল্যাকটোজ এলার্জি করতে পারে।
এরকম সমস্যা থাকলে ইনফেনটাইল কোলিক হবার সম্ভাবনা বেশি কারণ এটাই এই বয়সে বেশি হয়। তবে অন্য কিছু সমস্যাতেও বাচ্চার কান্না, পেটে ব্যাথা এবং পেট মোচড়ানো হতে পারে। সেগুলো হলোঃ প্রস্রাবে ইনফেকশন, কানের ইনফেকশন, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্টোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স, ফিশার, হার্নিয়া ইত্যাদি।
ব্রেষ্ট ফিডিং এর পজিশন এবং এটাচমেন্টঃ এসব বাচ্চাকে শুইয়ে দুধ খাওয়ানো যাবে না। বাচ্চাকে কোলে এমন ভাবে নিতে হবে যেন বাচ্চার পিঠ সোজা থাকে এবং বাচ্চাকে মায়ের শরীরের সাথে লাগিয়ে রাখতে হবে। বাচ্চার নাক থাকবে মায়ের নিপল বরাবর। মাথা হাতের উপড় এমন ভাবে থাকবে যেন বাচ্চা মাথা নড়াতে পারে। বাচ্চার মাথা পেট থেকে উচু থাকবে। বাচ্চা অবশ্যই খাওয়ার জন্য বড় করে মুখ হা করতে হবে। সেসময় এমন ভাবে বাচ্চাকে স্তন দিতে হবে যেন এরিওলার (নিপলের চারিদিকে কালো অংশ) বেশির ভাগ বা পুরোটা বাচ্চার মুখের ভেতর যায়। বাচ্চার নিচের ঠোট বাইরের দিকে থাকবে। মা এবং বাচ্চা উভয়ের পজিশন এমন হবে যেন আরাম করে বাচ্চা দুধ খেতে পারে এবং মা এভাবে লম্বা সময় দুধ খাওয়াতে পারে। এটাসমেন্ট ও পজিশন এর আর্টিকেল পড়ুন।
ফোরমিল্ক ওভারলোড পরিহার করাঃ বাচ্চাকে অবশ্যই এক স্তন থেকে লম্বা সময় খাওয়াতে হবে। সেটা ১০-১৫-২০ মিনিট হতে পারে। যতক্ষণ বাচ্চা খাবে এক স্তন থেকেই খাবে। পরের বার যখন বাচ্চা আবার খাবে তখন অন্য স্তন থেকে খাবে। এভাবে খাওয়ালে বাচ্চা মায়ের দুধের চর্বি সমৃদ্ধ দুধ পাবে এবং দুধ ভালো হজম হবে। যেসব বাচ্চা ৫ মিনিট এর বেশি খায়না তাদের জন্য কিছুটা দুধ ফেলে দিয়ে খাওয়াবেন। ফোরমিল্ক, হাইন্ডমিল্কের গুরুত্ব এবং ফোরমিল্ক ওভারলোড এর ২ টি আর্টিকেল পড়বেন।
মা গরুর দুধ পরিহার করবেনঃ এছাড়া বাচ্চার মা যদি গরুর দুধ খায় সেটার সামান্য পরিমাণ বুকের দুধের মাধ্যমে বাচ্চার কাছে গিয়ে ল্যাকটোজ এলার্জি করতে পারে। এজন্য বুকের দুধ খাওয়ানো বাচ্চার মা অবশ্যই গরুর দুধ পরিহার করবেন।
বাচ্চাকে ফর্মুলা দেয়া যাবে নাঃ বাচ্চা যদি ফর্মুলা খায় তবে বাচ্চার এসব সমস্যার একটা কারণ হতে পারে ফর্মুলায় থাকা ল্যাকটোজ এ ইনটলারেন্স বা এলার্জি। কারন ফর্মুলা গরুর দুধ থেকেই তৈরী হয়। যেসব বাচ্চার এরকম সমস্যা হচ্ছে এবং ফর্মুলাই একমাত্র ভরসা তাদের জন্য ল্যাকটোজ ফ্রি ফর্মুলা দিতে হবে।
বার্পিংঃ প্রতিবার খাওয়ানোর পর ঢেকুর তোলাতে হবে। ঢেকুর তোলানোর জন্য বাচ্চাকে কাধে এমন ভাবে নিবেন যেন পেট এর উপরের অংশ কাধে থাকে এবং বাচ্চার মুখ পিঠের দিকে থাকবে। এভাবে নিয়ে বাচ্চার পিঠে হালকা করে মালিশ করতে হবে। বার্পিং এর অন্য একটি নিয়ম হলো বাচ্চাকে বাম পায়ের উপড় বসিয়ে ডান হাত দিয়ে গলা এবং মুখ এমন ভাবে ধরবেন যেন মুখ হালকা খোলা থাকে এবং বাম হাত দিয়ে পিঠে হালকা করে চাপর দিবেন। এভাবে কিছুক্ষণ করে বাচ্চাকে আবার খাড়া করে ফেলতে হবে পুনরায় আবার করতে হবে। কোন কোন বাচ্চার ঢেকুর তুলতে ১৫-২০ মিনিটও লাগতে পারে। আবার অনেক সময় বাচ্চা ঢেকুর নাও তুলতে পারে। (বার্পিং বিষয়ে ইউটিউব দেখবেন)
টামি টাইমঃ ছোট্ট শিশুদের পেটের উপর ভর দিয়ে উপুড় হয়ে থাকাকে টামি টাইম বলা হয়। আপনার বাচ্চা যখন জেগে থাকবে তখন বিছানায় বা আপনার বুকের উপর বাচ্চাকে উপুড় করে শুইয়ে দিন। এভাবে বাচ্চা যতক্ষণ থাকতে পারে তাকে রাখবেন। কিছুক্ষণ পর বাচ্চা ক্লান্ত হয়ে গেলে আবার তাকে সোজা করে দিন। এভাবে প্রতি ২-৩ দিন পর পর ১ মিনিট করে সময় বাড়ানোর চেষ্টা করুন। বাচ্চা টামি টাইমে অভ্যস্ত হয়ে গেলে প্রতিবার ১০ মিনিট করে ৪-৬ বার বাচ্চাকে টামি টাইম অতিবাহিত করুন। টামি টাইম বিষয়ে বিস্তারিত।
পেটের ম্যাসাজঃ তেল হালকা গরম করে বা বেবী লোশন দিয়ে বাচ্চাকে ২ বেলা ম্যাসাজ করাবেন। এই ম্যাসাজটি ৩ টি ধাপের। প্রথমে বাচ্চাকে বিছানায় শুইয়ে বাচ্চার পেটের উপড় থেকে নিচে হাতের নিচের বর্ডার দিয়ে ম্যাসাজ করুন ৩ মিনিট। এরপর দ্বিতীয় ধাপে বাচ্চার হাটু ভাজ করে পেটের কাছে নিয়ে আসুন এবং পেতের সাথে চাপ দিন। কিছুক্ষণ রেখে পুনরায় পা সোজা করুন এবং সাইকেল চালানোর মত দুই পায়ের মুভমেন্ট করুন। এই দ্বিতীয় ধাপটি ১০-১২ বার করে তৃতীয় ধাপে চলে যান। এই ধাপের নাম আই লাভ ইউ ম্যাসাজ। প্রথমে আপনার হাতের ডান দিকে (বাচ্চার পেটের বাম দিকে উপড় থেকে নিচে ম্যাসাজ করুন। এরপর বাচ্চার পেটের উপরের দিকে দান থেকে বামে (আপনার হাতের বাম থেকে ডানে ম্যাসাজ করুন। শেষ ধাপে বাচ্চার পেটের ডান দিকে (আপনার হাতের বাম দিকে) নিচ থেকে উপড়ে উঠুন এরপর উপড়ে আপনার হাতের বাম থেকে ডানে যান এবং শেষে আপনার হাতের ডান দিকে উপড় থেকে নিচে নামুন। এভাবে বাচ্চার পেটের গ্যাস মলদ্বার দিয়ে বের করে দিতে হবে। নিচের লিংকে ক্লিক করে ম্যাসাজটি ইউটিউবে দেখুন। ম্যাসাজের সময় বাচ্চার সাথে গল্প করুন।
Colic & Constipation Baby Massage Course
সন্ধার পর বাচ্চাকে জাগিয়ে রাখতে চেষ্টা করুনঃ বাচ্চার রাতে ভাল ঘুমের জন্য বাচ্চাকে সন্ধার পর জাগিয়ে রাখতে চেষ্টা করতে হবে। বাচ্চার সাথে খেলা করতে হবে। টামি টাইম, ম্যাসাজ এসব করে সময় কাটাতে হবে। এসবের শেষে বাচ্চাকে কোন খেলনা দিয়ে ব্যাস্ত রাখতে হবে।
সঠিক ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ প্রতিদিন একই সময় ওকে দুধ খাওয়ায় ঘুমের জন্য রেডি করতে হবে। এরপর রুমের দরজা বন্ধ করে সব কাজ বন্ধ রেখে বাচ্চাকে নিয়ে ঘুমাতে যাবেন। কোন শব্দ, মোবাইল, কোন কাজ করা যাবেনা। রুমে খুব হাল্কা আলো রাখবেন। ঘুমানোর সময় ঘুমপাড়ানি গান শোনানো, গল্প, এবং চুমু দেয়া মায়ের সাথে শিশুর বন্ধন শক্তিশালী করে। শিশুর উত্তেজনা হ্রাস করে এবং ঘুমাতে সাহায্য করে। এভাবে প্রতিদিন একই অভ্যাস করতে হবে। একদিনে বা ১০ দিনে না হলেও একই ভাবে প্রতিদিন চেষ্টা করলে বাচ্চার ঘুমের অভ্যাস তৈরী হবে। বাচ্চাকে ঘুমাতে নেওয়ার আগে পেট ভরে খাওয়াতে হবে। শিশুর ঘুম বিষয়ে বিস্তারিত পড়ুন।
ঔষধঃ সব কিছুর পরও ইনফেনটাইল কলিক বাচ্চার পেটে গ্যাস এর জন্য কিছু ঔষধ দিতে হয়। সাথে এই নিয়ম গুলোও ফলো করতে হবে। এসব ঔষধের মধ্যে গ্যাসের ঔষধ, পেট ব্যাথার ঔষধ এবং ঘুমের ঔষধ অন্যতম। অবশ্যই এসব ঔষধ ফার্মেসি থেকে নিয়ে খাওয়ানো যাবে না। ডোজের হেরফের হলে এসব ঔষধ আপনার বাচ্চার মারাত্বক ক্ষতি করতে পারে। একই সাথে পেটে ব্যাথার কোন ঔষধ এই বয়সে দেয়া যায় সেটা অভিজ্ঞ শিশু ডাক্তার ছাড়া জানবেন না। এজন্য অবশ্যই এসব নিয়ম মানার পর সমস্যা রয়ে গেলে একজন অভিজ্ঞ শিশু ডাক্তার দেখাবেন।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556 (দুপুর ৩ টায়)
সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল
২৩/৬, রুপায়ন শেলফোর্ড, লেভেল ৮, শ্যামলী। (শিশু মেলার বিপরীতে)
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 09642400300
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd