ডায়ারিয়া সমস্যাটা এতটাই বেশি হয়ে থাকে যে ডায়ারিয়া ছাড়া কোন বাচ্চা বড় হতে পারেনি। ডায়ারিয়া এত ভিন্ন ভিন্ন কারণে এবং এত ভিন্ন ভিন্ন জীবাণু দিয়ে হতে পারে যে এর চিকিৎসাটাও ডায়ালেমায় পূর্ণ! আজ শিশুদের ডায়ারিয়ার কমন কিছু কারণ এবং করণীয় নিয়ে লিখব। আপনার শিশুর পায়খানা কখন স্বাভাবিক কখন অস্বাভাবিক সেটা বুঝতে হবে। সেজন্য জানতে হবে কেমন বা কতবার পায়খানা স্বাভাবিক। বাচ্চা জন্মের পর প্রথম যে পায়খানা হয় সেটা কালো বা ঘন কালচে সবুজ বর্ণের এবং আঠারো হয়। এরপর ক্রমান্নয়ে সেটা হলুদ বা ব্রাউন রঙ এর হয়ে যায়, সাধারণত ৭ দিনের ভেতর এই পরিবর্তন হয়ে যায়। বাচ্চা বুকের দুধ খলে পায়খানার স্বাভাবিক রঙ হবে সর্ষে হলুদ এবং এই সময়ে তরল ও দানা দানা পায়খানাই স্বাভাবিক। এটা ডায়ারিয়া নয়।
শুধু বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চার পায়খানা দিনে ৩-৬ বার যেমন স্বাভাবিক তেমনি ২-৪ দিন পর পর পায়খানাও স্বাভাবিক। বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চারা সাধারণত দিনে ২-৩ বার পায়খানা করে থাকে এবং ফর্মুলা খাওয়া বাচ্চারা সাধারণত দিনে ১ বার পায়খানা করে থাকে এবং এই পায়খানাটা কিছুটা ব্রাউন রঙ এর হয়ে থাকে যেটা বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চাদের থেকে ঘন হয়ে থাকে। ৬ মাস সম্পন্ন হয়ে গেলে বাচ্চাদের যখন সেমি সলিড বা সলিড খাবার দেয়া শুরু হয় তখন বাচ্চাদের পায়খানা তরল থেকে কিছুটা ঘন রূপ নেয় এবং সর্ষে হলুদ থেকে ব্রাউন রঙ এ পরিবর্তন হয়। এভাবে বাচ্চারা যত বেশি সলিড খেতে থাকবে তত পায়খানা ঘন হতে থাকবে। সলিড খাওয়া বাচ্চাদের স্বাভাবিক ভাবে দৈনিক ১-৩ বার পায়খানা হয়ে থাকে।
ডায়ারিয়ার কারণ গুলোকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়। নন-ইনফেকটিভ এবং ইনফেকটিভ। নন-ইনফেকটিভ কারন মানে হলো কোন জীবাণু দিয়ে ইনফেকশন হয়নি তবুও ডায়ারিয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আছে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স, কার্বোহাইড্রেড ইনটলারেন্স, ফোরমিল্ক ওভারলোড, এন্টিবায়েটিক এর সাইড ইফেক্ট, লম্বা সময় এন্টিবায়েটিক চালানো, হাইপারথাইরয়েড ইত্যাদি। এছাড়া অন্ত্রের কিছু সমস্যা ডায়ারিয়া উপসর্গের মত দেখা যায়, যেমনঃ ইনফ্লামেটরি বাওয়াল সিন্ড্রোম (আইবিএস), সিলিয়াক ডিজিজ, শর্ট বাওয়াল সিন্ড্রোম, ভিলাস এট্রোপি ইত্যাদি। এসব অন্ত্রের রোগে সাধারণত লম্বা সময় ধরে ডায়ারিয়া থাকে।
ইনফেক্টিভ বা জীবানুর সংক্রামণের মধ্যে আছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং পরজীবি। সুতরাং সকল ধরনের জীবানু ডায়ারিয়া করতে পারে। ভাইরাসের ভেতর রয়েছে রোটা, নরো, এডিনো, এসট্রো, করোনা, ক্যালসি, পিকরোনা ইত্যাদি। ব্যাকটেরিয়াল মধ্যে শিগেলা, সালমোনেলা, ই-কোলাই, ভিব্রিও কলেরি, ক্যামপাইলোব্যাকটার ইত্যাদি শিশুদের ডায়ারিয়ার প্রধান কারণ। পরজীবি বা প্যারাসাইট এর ভেতর জিয়ারডিয়া, এন্টেমিবা, ক্রিপ্টোস্পোরোডিয়াম, সাইক্লোস্পোরা, আইসস্পরা ইত্যাদি। ছত্রাক জনিত ডায়ারিয়া ঘটায় ক্যান্ডিডা এলবিক্যানস।
এতক্ষণ বললাম ডায়ারিয়ার কারণ। এখন চলুন জেনে নেই বাচ্চাদের কমন যেসব ডায়ারিয়া হয় সেগুলোর উপসর্গ ও পায়খানার ধরণ।
ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সঃ এসব বাচ্চা বমি, পেটে ব্যাথা, মোচড়ানো, গ্যাস এবং পাতলা পায়খানার সমস্যায় ভুগতে থাকে। সব গুলো সমস্যা সব বাচ্চার থাকবে এমন নয়। বাচ্চা যদি ফর্মুলা খায় তবে সরাসরি অথবা বাচ্চার মা যদি গরুর দুধ খায় সেটার সামান্য পরিমাণ বুকের দুধের মাধ্যমে বাচ্চার কাছে গিয়ে ল্যাকটোজ এলার্জি করতে পারে। এসব বাচ্চার পায়ুপথে গন্ধযুক্ত গ্যাস যাওয়া পরিলক্ষিত হতে পারে, সাথে পায়খানা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হবে। দুধ হজম না হওয়ার কারনে পায়খানার ধরনও স্বাভাবিক হয়না।
ফোরমিল্ক ওভারলোডঃ অনেক মায়েরা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় বারবার স্তন পরিবর্তন করেন। আবার অনেকে বাচ্চাকে ঘন্টায় ঘন্টায় অল্প পরিমাণ দুধ খাওয়ান। এতে বাচ্চা পানি এবং ল্যাকটোজ সমৃদ্ধ ফোর মিল্ক বেশি পায়। এর ফলে অন্ত্রে বেশি বেশি গ্যাস উৎপন্ন হয়। সাথে সবুজ পায়খানা অথবা ফেনা যুক্ত খারাপ পায়খানা হতে পারে।
ভাইরাল ডায়ারিয়াঃ ৫ বছরের নিচে শিশুদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ রোটা ভাইরাস। ২ বছরের কম বয়সী শিশুরা আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ৮০ ভাগের বেশি ভাইরাসের কারণে হয়। ভাইরাসের জীবাণু ক্ষুদ্রান্তের ভিলাই এবং এন্টারোসাইট কে আক্রান্ত করে এবং নষ্ট করে দেয়। ফলে খাবার শোষণ হয়না এটাকে ওসমোটীক ডায়ারিয়া বলে। রোটা ভাইরাস ক্যালসিয়াম চ্যানেলকে খুলে দেয় ফলে ক্যালসিয়াম কোষের ভেতর ঢুকে এবং সোডিয়াম এবং পানি বের হয়ে যায়। ফলে ক্ষুদ্রান্ত থেকে সিকরেশন বেড়ে যায়। এটাকে সিক্রেটরী ডায়ারিয়া বলে। সুতরাং ভাইরাস একই সাথে ওসমোটিক এবং সিক্রেটরী ডায়ারিয়া করে। ভাইরাল ডায়ারিয়ার অন্য নাম একিউট ওয়াটারি ডায়ারিয়া।
সাধারণত রোটা ভাইরাল ডায়ারিয়া শুরু হয় বমি দিয়ে, এরপর পাতলা পায়খানা শুরু হয়। দিনে সংখ্যবার পাতলা পায়খানা হয় এবং বাচ্চা খুব দ্রুতই দুর্বল হয়ে পরে। এই পাতলা পায়খানাটা সাধারণত শুরুতে পায়খানা এবং তরল পানি মিক্সড থাকে। এভাবে ২-৩ বার হওয়ার পর শুধু হলুদ পানি যাওয়া শুরু হয় এবং ফ্রিকোয়েন্সি বাড়তে থাকে। শুরুতে ২-৩ ঘন্টা পর পর পায়খানা হলেও ক্রমান্নয়ে সেটা ঘন্টায় ঘন্টায় বা ৩০ মিনিট পর পর হতে থাকে। অবশ্য এটা স্রংক্রামণের লেভেল ভেদে ভিন্ন হয়। ভাইরাল ডায়ারিয়ায় সামান্য জ্বরও থাকতে পারে। তবে সেটা ক্রমান্নয়ে কমে যায়। দিনে সংখ্যবার পাতলা পায়খানা হওয়ায় বাচ্চা খুব দ্রুতই দুর্বল হয়ে পরে, একারণে এই ধরনের ডায়ারিয়া প্রাণঘাতী হতে পারে।
বেসিলারি ডিসেন্ট্রিঃ যে সব ব্যাকটেরিয়া বাচ্চাদের ডায়ারিয়া করে তার মধ্যে শিগেলা অন্যতম। এরা অন্ত্রের মিউকোসাকে ভেদ করে ভেতরে ঢুকে যায় এবং সেখানে বংশ বৃদ্ধি করে আরো ছড়িয়ে গিয়ে অন্ত্রের লেয়ারের ভেতর প্রবেশ করে সেখানে এপিথেলিয়াম নষ্ট করে। এর দ্বারা সংক্রমণকে বলা হয় ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রি। হঠাৎ করে এর উপসর্গ শুরু হয়। আক্রান্ত হলে বাচ্চার অল্প অল্প করে পায়খানা হবে, পায়খানায় মিউকাস বা শ্লেষা দেখা যাবে। সাথে রক্ত থাকতে পারে। বাচ্চার পেট ব্যাথা এবং মধ্যম-উচ্চ মাত্রার জ্বর থাকবে। সাধারণত এই রোগীরা ৮-১০ বার বা এর বেশি পায়খানা করে থাকে, তবে পায়খানায় খুব বাজে গন্ধ থাকে না। পায়খানা করার সময় মলদ্বারে ব্যাথা থাকতে পারে। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে পেট ব্যাথা ভালো বুঝা যায়না তবে পেট মোচড় দিলে এবং কান্না করলে এদিকে চিন্তা করতে হবে। সঠিক চিকিৎসা না হলে অন্ত্রে আলসার হয়ে পরবর্তিতে পারফোরেশন হয়ে জটিল জীবনঘাতী অবস্থা ধারণ করতে পারে।
ই-কোলাই ডায়ারিয়াঃ ই-কোলাই এর কিছু স্পেসিস ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রির মত রক্ত আমাশয় করে। তবে অন্যান্য ই-কোলাই ওয়াটারি ডায়ারিয়া করে। যেটায় বমি থাকে এবং পানিশূন্যতাও থাকে। এই ডায়ারিয়াটি রোটা ভাইরাস দ্বারা ডায়ারিয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে এই ডায়ারিয়ায় জ্বর থাকবে এবং পেটে ব্যাথা থাকবে।
কলেরাঃ কলেরা একটি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, যেটা ভিব্রিও কলেরী দিয়ে হয়। এই ব্যাক্টেরিয়া ক্ষুদ্রান্তের এপিথেলিয়ামে প্রবেশ করে এবং বংশ বৃদ্ধি করে এং কলেরা টক্সিন উৎপন্ন করে। কলেরা টক্সিন গ্যাংলিওসাইড রিসিপটর জিএম১ এর সাথে যুক্ত হয়ে সি-এএমপি বাড়িয়ে দেয় এবং পটাসিয়াম, বাইকার্বনেট এবং পানি সিক্রেশন বাড়িয়ে দেয়। কলেরা টক্সিন একই সাথে সোডিয়াম ক্লোরাইড এর শোষণ / এবজর্বশন কমিয়ে দেয়। ফলে মাত্রারিক্ত লবণ এবং পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এই ডায়ারিয়াটা হয় চাল ধোয়া পানির মত। সাথে বমি থাকে, বমি দূরে গিয়ে পড়ে। দ্রূতই বাচ্চার পানি শূন্যতা তৈরী হতে পারে। এই ডায়ারিয়ায় কোন পেট ব্যাথা বা জ্বর থাকে না। তবে লবণ কমে যাওয়ার কারণে মাসল ক্রাম্প দেখা দিতে পারে।
এমেবিক ডিসেন্ট্রি (আমাশয়): এন্টেমিবা হিস্টোলাইটিকা নামক প্যারাসাইট দিয়ে আমাশয় আমাদের দেশে বেশ কমন। যেটার উপসর্গ ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রির অনুরূপ। আক্রান্ত বাচ্চার পায়খানায় মিউকাস বা শ্লেষা দেখা যাবে। সাথে রক্তও থাকতে পারে। বাচ্চার পেট ব্যাথা এবং জ্বর থাকতে পারে। পায়খানা করার সময় মলদ্বারে ব্যাথা থাকতে পারে। তবে কিছু পয়েন্ট দিয়ে এই ডায়ারিয়াকে আলাদা করা যায়। যেমন এখানে অল্প অল্প পায়খানা না হয়ে বেশি পরিমাণে গাঢ রঙ এর পায়খানা হবে এবং ফ্রিকোয়েন্সি এত বেশি বার না হয়ে দৈনিক ৬-৮ বার হয়। ধীরে ধীরে উপসর্গ দেখা দেয় এবং তীব্র বাজে গন্ধ যুক্ত পায়খানা হয়। জ্বর নাও থাকতে পারে, হলেও স্বল্প মাত্রার জ্বর হয়।
জিয়ারডিয়াসিসঃ জিয়ারডিয়া লাম্বলিয়া নামক প্যারাসাইট দিয়ে ডায়ারিয়া আমাদের দেশে বেশ কমন। এ ধরনের ডায়রিয়ায় খাবার ঠিক ভাবে হজম না হওয়ার ফিচার পাওয়া যায়। পায়খানা হয় ছাবড়া ছাবড়া ধরণের, সাথে মিউকাস এবং ফ্যাট থাকতে পারে। বমি বমি ভাব বা বমি, গ্যাস এবং পায়খানার রাস্তায় গ্যাস বের হওয়ার সমস্যা হয়ে থাকে। হালকা পেট ব্যাথা এবং হালকা জ্বর থাকতেও পারে, না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অনেক সময় এ ধরণের ডায়ারিয়া নিজে থেকেই ভালো হয়ে যেতে পারে।
বাচ্চার সর্দিঃ বাচ্চার সর্দি লাগলে পায়খানা অস্বাভাবিক হতে পারে। এর কারণ হলো ঠান্ডা লাগলে শরীরের সকল সিকরেশন বেড়ে যায়। যেমন নাক-চোখ দিয়ে পানি পড়ে। ফুসফুসের সিকরেশন বেড়ে যায় এবং বুকে কফ জমে। একই ভাবে অন্ত্রের সিকরেশন বেড়ে যায় এবং মিউকাস প্রোডাকশনও বেড়ে যায়। ফলে পায়খানা পাতলা হতে পারে এবং পায়খানায় মিউকাস যেতে পারে। পিত্তথলির সিকরেশন বেড়ে যায় এবং বেশি পিত্তরস প্রডাকশন করে যেটা অন্ত্রে পুরোটা শোষণ হতে পারে না এবং পায়খানার সাথে বের হয় বিধায় পায়খানা সবুজ হতে পারে।
বাসায় মাছি থাকলে অবশ্যই মাছি দূর করতে হবে।
বাসার মেঝে এন্টিসেপটিক দিয়ে ২-৩ দিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে।
টেবিল এবং এরকম আসবাবপত্র এন্টিসেপটিক দিয়ে ২-৩ দিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে।
খাবার পানির সোর্সে কোন সমস্যা আছে কিনা যাচাই করে সমাধান করতে হবে। প্রয়োজনে ফিল্টার পরিষ্কার করতে হবে অথবা কিছুদিন ফিল্টার ব্যবহার না করে ফুটিয়ে পানি খেতে হবে।
বাচ্চাদের হাত বার বার খাবার পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে।
ছোট বাচ্চাদের খেলনা যেসব মুখে দেয় সেগুলো পরিষ্কার করে দিতে হবে।
খালি পায়ে টয়লেটে যাওয়া পরিহার করতে হবে।
বাসায় অন্য কেউ আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা করতে হবে।
প্রতিবার টয়লেট শেষে এবং খাবার আগে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
বাচ্চার ডায়ারিয়া শুরু হলে অনেকেই দোকান থেকে ফিলমেট / এমোডিস / সিপ্রোসিন / এজিথ্রমাইসিন / সেকনিড ইত্যাদি ঔষধ কিনে খাওয়া শুরু করে দেন। একবার ভেবে দেখেন না আপনার বাচ্চার ডায়রিয়া চিকিৎসায় এর প্রয়োজন আছে কিনা। এটাও ভাবেন না হুট করে এন্টিবায়েটিক শুরু করে হুট করে কাজ হচ্ছে না বলে বন্ধ করে দেয়া বা অন্য এন্টিবায়েটিক শুরু করার খারাপ দিক কত বিস্তর এবং সদূরপ্রসারী!
আপনার বাচ্চার ডায়ারিয়া শুরু হলে যদি সুযোগ থাকে তবে প্রথমেই উচিত ভালো ল্যাব থেকে পায়খানার একটা রুটিন এবং মাইক্রোসকপি পরীক্ষা করা। এই রিপোর্ট আসতে বেশি সময় লাগে না। এরপর করা যায় পায়খানার কালচার ও সেন্সেটিভিটি যেটার রিপোর্ট আসতে ৩ দিন সময় লেগে যায় বিধায় অনেক সময় এই রিপোর্টের জন্য বসে না থেকে আগেই উপসর্গ নির্ভর চিকিৎসা শুরু করে দিতে হয়। তবে এই পরীক্ষার রিপোর্ট এর উপড় ভিত্তি করে পরবর্তীতে চিকিৎসা পরিবর্তন করা লাগতে পারে।
বেশির ভাগ ডায়ারিয়ায় বড় এন্টিবায়েটিকের প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে ভাইরাল ডায়ারিয়ায় এন্টিবায়েটিক এর ব্যবহার আপনার বাচ্চার জন্য ক্ষতিকারক। ভাবছেন কিভাবে? আমাদের অন্ত্রে বেশ কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যাদের নরমাল ফ্লোরা বলে। যারা এখানে স্বাভাবিক ভাবেই বসবাস করছে। এরা বিভিন্ন ভাবে আমাদের উপকার করে থাকে, এমনকি খাবার হজমেও এদের ভূমিকা রয়েছে। কারণ ছাড়া এন্টিবায়েটিক ব্যবহার, ব্রড স্পেকট্রাম (বেশি কাভারেজ) এন্টিবায়েটিক ব্যবহার এসব নরমাল ফ্লোরাকে মেরে ফেলে। ফলে ডায়ারিয়ার প্রকোপ আরো বেড়ে যায়। সেজন্য আপনার বাচ্চার ডায়ারিয়ায় নিজে চিকিৎসা না দিয়ে বাচ্চাকে একজন অভিজ্ঞ শিশু ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করাবেন।
উপড়ের আলোচনা থেকে নিশ্চয় বুঝে গেছেন ডায়ারিয়া অনেক ভিন্ন ভিন্ন কারণে হয়ে থাকে এবং এদের চিকিৎসাও ভিন্ন ভিন্ন বিধায় এক্ষেত্রে বিস্তারিত হিস্ট্রি নিয়ে এর কারন সম্পর্কে অনুমান করে তারপর চিকিৎসা করতে হয়।
এই হিস্ট্রি সঠিক ভাবে নেয়া এবং কারণ অনুমান করা অভিজ্ঞতার ব্যাপার। এজন্য ডায়ারিয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসা নিতে হবে। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পূর্বের সময়টাতে প্রাথমিক ভাবে ওরস্যালাইন ও জিংক খাওয়াবেন। ওরস্যালাইন পানিশূন্যতা রোধ করে শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে। ৪ মাসের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওরস্যালাইন শুরু করবেন না। সেক্ষেত্রে বেশি করে বুকের দুধ খাওয়াবেন।
জিংক সিরাপঃ জিংক এর অভাব বাচ্চার ডায়ারিয়াকে আরো খারাপ করে তুলতে পারে। একই সাথে পর্যাপ্ত জিংক ডায়ারিয়ায় ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে আনে এবং এপিথেলিয়াল লস যেতা হচ্ছে সেটা পুষিয়ে দেয়। তাই অবশ্যই বাচ্চাকে ১০-১৪ দিন প্রোপার ডোজে জিংক সিরাপ দিতে হবে।
১০ কেজির নিচেঃ হাফ চামচ দৈনিক ২ বেলা
১০ কেজির উপড়ঃ ১ চামচ দৈনিক ২ বেলা
৩০ কেজির উপড়ঃ ২ চামচ দৈনিক ২ বেলা
ওরস্যালাইনঃ পানি ও লবণ শূন্যতা প্রতিরোধে ওরস্যালাইনের বিকল্প নেই। ৫০০ মিলি পানিতে ১ প্যাকেট ওরস্যালাইন গুলিয়ে প্রতিবার পায়খানার পর বাচ্চার ওজন যত কেজি তত চামচ ওরস্যালাইন খাওয়াবেন। অবশ্যই স্যালাইন অর্ধেক প্যাকেট গুলাবেন না। এতে লবণের ভারসাম্য ঠিক থাকে না। যেটা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকারক। এই স্যালাইন ৮ ঘন্টা পর ফেলে দিয়ে পুনরায় নতুন করে বানাতে হবে।
বাচ্চাকে ঠিক ভাবে স্যালাইন ও তরল খাওয়াতে পারলে বাচ্চার শরীরে পানি শূন্যতা সৃষ্টি হয়না ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল থাকে এবং বাচ্চা সহজে জীবানুকে হারাতে পারে। অন্যদিকে বাচ্চার শরীরে পানি ও লবণ শূন্যতা দেখা দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, লবণ শূন্যতা বাচ্চাকে দূর্বল করে দেয়। বাচ্চা নিস্তেজ হয়ে যায় এবং বুকের দুধও টেনে খেতে পারে না। এমতাবস্থায় বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করে শিরায় স্যালাইন দেয়া ছাড়া বাচ্চাকে বাচানো সম্ভব হয়না।
খাবারঃ বাচ্চাকে কাচা কলা দেয়া পোলাউ এর চালের জাই ভাত এবং কাচা কলা ভর্তা বেশি বেশি খেতে দিবেন। কাচা কলায় থাকা পেকটিন পানি শোষণ করে পায়খানাকে শক্ত করে, অলিগো ফ্রুক্টোন অন্ত্রে থাকা নরমাল ফ্লোরা বা ভালো ব্যাকটেরিয়াকে চাংগা করে এবং খাবার হজমে সাহায্য করে। এছাড়া কাচা কলায় থাকা আয়রন এবং পটাসিয়াম এসময় খুবই উপকারী। এছাড়া ডাবের পানি দিতে পারেন, ডাবের পানিতেও পর্যাপ্ত পটাশিয়াম থাকে। ঘরে তৈরী চিকেন স্যুপ দিতে পারেন। এসময় পায়খানা বাড়ানোর জন্য যেসব খাবার ব্যবহৃত হয় সেসব পরিহার করবেন। ডায়ারিয়ার সময় গরুর দুধ, ফর্মুলা, ফল, ফলের জুস, সবজি, শাক পরিহার করতে হবে। ৬ মাসের কম বাচ্চাদের বেশি বেশি বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ৪ মাসের নিচের বাচ্চাদের প্রথমেই ওরস্যালাইন না দিয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে দেয়া উচিত।
এন্টিবায়েটিকঃ অবশ্যই কিছু ডায়ারিয়ায় এন্টিবায়েটিক এর প্রয়োজন আছে। এর জন্য একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে বাচ্চার পুরো হিস্ট্রি শেয়ার করে প্রয়োজনীয় এন্টিবায়েটিক সঠিক ডোজে দিবেন।
এই আর্টিক্যালটি পুরোটা মন দিয়ে পড়লে আশাকরি আপনি আপনার বাচ্চার ডায়ারিয়ার ধরণ খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারবেন। আপনার বাচ্চার ডায়ারিয়া চিকিৎসায় আর্টিকেলটি সহায়ক হবে বলেই আমার বিশ্বাস।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556 (দুপুর ৩ টায়)
সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল
২৩/৬, রুপায়ন শেলফোর্ড, লেভেল ৮, শ্যামলী। (শিশু মেলার বিপরীতে)
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 09642400300
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd