মুখগহ্বরে ঈষৎ হলদেটে সাদা ঘা, আকারে কয়েক মিলিমিটার, চারপাশ লাল ও সামান্য ফোলা। কিছু খেতে, পান করতে বা কথা বলতে গেলে প্রচণ্ড জ্বলুনি এবং ব্যথা- অল্প কথায় এই হচ্ছে মাইনর এপথাস আলসার। এটি এপথাস স্টোমাটাইটিস বা canker sore নামেও পরিচিত। এতে আক্রান্ত হয়ে ভোগেননি, এমন মানুষ খুব কমই আছেন বোধহয়। শিশুরাও অহরহ এতে ভুগে কষ্ট পেয়ে থাকে!
কেন হয় এই আলসার?
এই আলসারের কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে
লৌহ ফলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন বি১২ এর অভাব,
বংশগত প্রভাব,
মুখে আঘাত লাগা,
হরমোনের তারতম্য,
মানসিক চাপ,
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা,
অন্যান্য রোগ (যেমন- coeliac disease, Behçet's disease) ইত্যাদি এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হয়।
প্রতিরোধ:
১) দৈনন্দিন চাহিদামত লৌহ ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ।
২) মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৩) আঘাত লাগা প্রতিরোধ করা: মুখে ধারালো বাঁকা বা ভাঙা দাঁত, ত্রুটিপূর্ণ restoration (ফিলিং), prosthesis (আর্টিফিসিয়াল ক্রাউন বা ক্যাপ, ব্রিজ, ডেঞ্চার) বা appliance থাকলে তা সারানোর ব্যবস্থা করা। নরম টুথব্রাশ দিয়ে সতর্কতার সাথে দাঁত ব্রাশ করা।
৪) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো - প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যগ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত শরীরচর্চা ও মানসিক যত্ন, ওজন স্বাভাবিক রাখা এক্ষেত্রে সহায়ক।
৫) মুখগহ্বরের পরিচ্ছন্নতার সাধারণ নিয়মকানুন সবসময় মেনে চলা।
করণীয়ঃ
সাধারণত কোনও চিকিৎসা না নিলেও aphthous ulcer ৭ দিনের মধ্যে সেরে যায়।
তবে যদি
* বেশি জ্বালা বা ব্যথা হয়,
* বারবারই এতে আক্রান্ত হতে থাকেন,
* ৩ সপ্তাহেও ঘা না সারে,
* ঘা এর সাথে জ্বর, গলা বা ঘাড়ে চাকা/দলা বা অন্য কোনও উপসর্গ থাকে,
এই চারটির মধ্যে অন্তত একটি মিলে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
মনে রাখবেন, aphthous ulcer ছাড়াও মুখে আরও অনেক রকমের ঘা হতে পারে। দেখতে এক কিংবা লক্ষণ কদাচিৎ মিলে গেলেও এদের কারণ ও চিকিৎসা একটি অন্যটি থেকে আলাদা। তাই সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্যে শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড ডাক্তারেরই শরণাপন্ন হোন।
- ডা. ইফফাত সামরিন মুনা, ডেন্টাল সার্জন।