অরুচির কারণ ও করণীয় 

শিশুর অরুচির কারণ সমূহঃ 

১. সংক্রমণ বা তীব্র অসুস্থতা (Infections & Acute Illnesses):

• ভাইরাল ফিভার (সাধারণ ঠান্ডা, ইনফ্লুয়েঞ্জা)

• উপড়ের শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশনঃ টনসিলাইটিস, ফ্যারেনজাইটিস, ল্যারেনজাইটিস ইত্যাদি

• নিচের শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশনঃ ব্রংকিওলাইটিস, নিউমোনিয়া ইত্যাদি

• প্রস্রাবে ইনফেকশন (UTI)

• কানের ইনফেকশন (Otitis media)

• ডায়রিয়া / গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসস / আমাশয়

• মেনিনজাইটিস (কমন না, তবে গুরুত্বপুর্ণ)

২. দীর্ঘস্থায়ী বা স্থায়ী রোগ (Chronic illnesses):

• রক্ত স্বল্পতা (লোহিত রক্তকণিকার স্বল্পতা, বিশেষ করে আয়রন ডেফিসিয়েন্সি)

• ক্রনিক লিভার ডিজিজ

• ক্রনিক কিডনি ডিজিজ

• হার্ট ডিজিজ বা কনজেনিটাল হার্ট ডিজঅর্ডার

• টিউবারকুলোসিস (যক্ষ্মা)

• সেলিয়াক ডিজিজ (গ্লুটেন সংবেদনশীলতা)

• ক্রনিক ডায়রিয়া (জিয়ার্ডিয়াসিস, ম্যালঅ্যাবজর্পশন)

• জেনেটিক মেটাবলিক ডিজঅর্ডার

৩. পরজীবী সংক্রমণ (Parasitic infestations):

• জিয়ার্ডিয়া ল্যাম্বলিয়া (Giardiasis)

• কৃমি (Ascaris, Hookworm, Whipworm)

• অ্যামিবায়াসিস

৪. হরমোন ও এনডোক্রাইন সমস্যা (Hormonal/Endocrine disorders):

• থায়রয়েড সমস্যা (হাইপো থায়রয়েড)

• এডরেনাল  ইনসাফিসিয়েন্সি

• গ্রোথ হরমোন স্বল্পতা

৫. পুষ্টি-সংক্রান্ত সমস্যা (Nutritional causes):

• অপুষ্টি (Protein Energy Malnutrition

• ভিটামিন বা খনিজের ঘাটতি (Vitamin A, Zinc deficiency)

• অত্যধিক দুধ খাওয়া (দুধে পেট ভরে গেলে অন্য খাবারে রুচি থাকে না)

• অতিরিক্ত জুস বা চিনি জাতীয় পানীয় গ্রহণ

৬. মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত কারণ (Psychosocial & Behavioral causes):

• অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (ASD)

• আচরণগত জেদ ও বাছবিচার করে খাওয়া (Food refusal, picky eating)

• প্যারেন্টাল প্রেসার ও খাওয়ানোর সময় অশান্তি

• বিষন্নতা বা শিশুর মানসিক অস্বস্তি

৭. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Drug side effects):

• কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, আয়রন সিরাপ, ফেনোবার্বিটাল, অ্যান্টিহিস্টামিন

• ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কেমোথেরাপি

৮. দাঁতের সমস্যা (Teething & Dental issues):

• দাঁত উঠা বা দাঁতের ব্যথা

• মুখে ঘা বা আঘাত (Stomatitis, aphthous ulcer)ক

৯. পরিবেশগত কারণ:

• অপরিচ্ছন্ন খাবার পরিবেশ

• খাবারের গন্ধ, রং বা টেক্সচার অপছন্দ

• অন্যদের খেতে না দেখা বা একা খাওয়ানো

বাচ্চার অরুচি দীর্ঘস্থায়ী হলে নির্ভরযোগ্যভাবে কারণ চিহ্নিত করার জন্য কিছু বিশেষ পরীক্ষা করা দরকার হতে পারে। এছাড়া চিকিৎসা প্রয়োজন হওয়া ও তার ধরন নির্ভর করে কারণ ও উপসর্গের উপর। 

যে সকল পরীক্ষা করা যেতে পারে:

১. সাধারণ রক্ত পরীক্ষা:

• CBC (Complete Blood Count): অ্যানিমিয়া বা ইনফেকশনের লক্ষণ জানতে

• ESR/CRP: দেহে প্রদাহ বা দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ আছে কিনা বুঝতে

• Peripheral blood film: অ্যানিমিয়ার ধরন ও পরজীবী খোঁজার জন্য

২. পুষ্টি সম্পর্কিত পরীক্ষা:

• Serum Iron, Ferritin, TIBC: আয়রন ঘাটতির অ্যানিমিয়া চিহ্নিত করতে

• Serum Vitamin D & B12: বিশেষত যদি হাড় ব্যথা, দুর্বলতা বা মনমরা ভাব থাকে

• Serum Zinc level: বারবার সংক্রমণ বা অরুচি থাকলে বিবেচ্য

৩. পায়খানা পরীক্ষা (Stool R/M/E):

• কৃমি, জিয়ার্ডিয়া, আমিবা, রক্ত, মিউকাস ইত্যাদি দেখতে

• Stool for reducing substances: ম্যালঅ্যাবজর্পশন চিহ্নিত করতে

৪. প্রস্রাব পরীক্ষা (Urine R/M/E & Culture)

৫. থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট:

• TSH, FT4: যদি বৃদ্ধি ধীর হয় বা হাইপোথাইরয়ডিজম সন্দেহ হয়দ

৬. লিভার ও কিডনি ফাংশন টেস্ট (LFT, RFT):

• যদি দীর্ঘকালীন অসুস্থতা বা হেপাটিক সমস্যা থাকে

৭. বুকের এক্সরে এবং টিবি পরীক্ষা

• যদি যক্ষ্মার সন্দেহ থাকে (বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী অরুচি ও ওজন হ্রাসে)

৮. পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম

• পেটের অস্বাভাবিক কিছু আছে কিনা দেখতে (mass, lymphadenopathy ইত্যাদি)

চিকিৎসা কখন প্রয়োজন:

চিকিৎসা প্রয়োজন যদি নিচের যেকোনোটি লক্ষণ থাকে:

• অরুচি ২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়

• ওজন কমে যায় বা বৃদ্ধি থেমে যায়

• ডায়রিয়া, জ্বর, কাশি, সর্দি, বমি বা অন্য উপসর্গ থাকে

• শিশু দুর্বল, উদাসীন বা ক্লান্ত দেখায়

• পরিবারে যক্ষ্মা, কৃমি বা সংক্রমণের ইতিহাস থাকে

• খাবারে চরম অনীহা বা কেবল তরলজাতীয় খাবারে নির্ভরতা
  
  

কি ধরণের চিকিৎসা প্রয়োজন:

চিকিৎসা নির্ভর করবে মূল কারণের উপর। নিচে কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি দেওয়া হলো:

১. সুনির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসা:

• ইনফেকশন থাকলে – প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক/অ্যান্টিপ্যারাসিটিক

• কৃমি থাকলে – ডিওয়ার্মিং (Albendazole, Mebendazole)

• অ্যানিমিয়া থাকলে – আয়রন সিরাপ ও আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্য

• ভিটামিন/খনিজ ঘাটতি থাকলে – প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট (Vit A, Vit D, Zinc)

• হাইপোথাইরয়ডিজম – থাইরক্সিন থেরাপি
  
  

২. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও পুষ্টি পরামর্শ:

• ঘন ঘন অল্প পরিমাণে প্রিয় খাবার দিন

• পরিবারসহ খেতে উৎসাহ দিন

• খাবারের রং, গন্ধ, টেক্সচার আকর্ষণীয় করুন

• উচ্চ ক্যালরী যুক্ত খাবার (ইলিশ, চিংড়ী, চিজ, ঘি, বাটার, দই, ডিম, বাদাম, খিচুড়ী ইত্যাদি) খাওয়াবেন।

• জুস, চিনি যুক্ত ড্রিংক, অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি, চিপস, লজেন্স, বিস্কুট ইত্যাদি পরিহার করবেন।

• একবারে পর্যাপ্ত খাওয়াতে না পারলে ৩ ঘন্টা পর পর দৈনিক ৫ বার ভারী খাবার দিবেন।

• ভারী খাবার দেয়ার নির্দিষ্ট শিডিউল করবেন এবং মাঝে এটা-সেটা খাবার পরিহার করবেন।

• রুচি বর্ধক খাবার (আদা, দারুচিনি, জিরা, পুদিনা পাতা, মৌরি, কমলা, লেবু, দই) শিশুর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখবেন। 
  
  

৩. অ্যাপেটাইজার ঔষধ:

• কিছু শিশুতে জিংক, লিভার টনিক বা অ্যাপেটাইট স্টিমুল্যান্ট সাময়িকভাবে ব্যবহার করা যায় — তবে চিকিৎসকের পরামর্শে
  
  

৪. মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ (যদি প্রয়োজন হয়):

• শিশু বিশেষজ্ঞ বা চাইল্ড সাইকোলজিস্টের সহযোগিতা

© Dr-Adnan Al Berunie

MBBS, MS (Pediatric Surgery)

SCHP (Paediatrics) Australia, CCD

Child Specialist & Pediatric Surgeon

চেম্বারঃ 

আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল

২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

রবি, মংগল ও বৃহ, বিকেল ৫ঃ০০ - ৭ঃ০০

সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556

ইউনিএইড ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন 

2-A/1, দারুস সালাম রোড, মিরপুর-১। 

শনি, সোম ও বুধবার, সন্ধা ৭ঃ৩০ - ৯ঃ৩০ 

সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 017333702755

অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd