অনেক মায়েরাই অলিভ ওয়েল সম্পর্কে জানতে চান। এই আর্টিকেলে তেলের বিস্তারিত লিখার চেষ্টা করবো। প্রথমেই জেনে নেই কত রকম অলিভ ওয়েল আছে এবং তাদের বিশেষত্ব।
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েলঃ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল বেষ্ট কোয়ালিটি এবং সবচেয়ে দামী। এটা শুধু গ্রিন্ডিং এবং প্রেসিং এর মাধ্যমে বের করা হয়। এর তৈরীতে কোন ক্যামিক্যাল, তাপ ব্যবহৃত হয়না। বের করার পর কোন রিফাইন প্রসেস হয়না, ফলে এটা একদম খাটি।
ভার্জিন অলিভ ওয়েলঃ এটা ২য় সেরা অলিভ ওয়েল। এটাও ভার্জিন এর মত একই ভাবে উৎপন্ন হয় তবে এত উচ্চ স্ট্যান্ডার্ড মানা হয়না। দামে ও মানে এক্সট্রা ভার্জিন থেকে এক ধাপ কম।
পিউর বা রেগুলার অলিভ ওয়েলঃ এই অলিভ ওয়েল উচ্চ তাপে এবং ক্যামিক্যাল এক্সট্রাকশনের মাধ্যমে বের করা হয়। তবে বের করার পর এর সাথে অন্য তেল মিক্স করা হয়না বিধায় এটাকে পিউর অলিভ ওয়েল বলা হয়।
লাইট অলিভ ওয়েলঃ এই অলিভ ওয়েল উচ্চ তাপে এবং ক্যামিক্যাল এক্সট্রাকশনের মাধ্যমে বের করা হয় ফলে নিউট্রিশনের দিক থেকে ভার্জিন থেকে বেশ পিছিয়ে। বের করার পর রিফাইন করা হয় এবং অনেক সময় অলিভ ওয়েলের সাথে অন্য ভেজিটেবল ওয়েল এবং ক্যামিক্যাল যুক্ত করা হয়।
উপড়ের আলোচনা থেকে সহজেই বুঝে গেছেন এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল সেরা। তবে তার মানে এই নয় যে ভার্জিন অলিভ ওয়েল খারাপ। আপনারা নিশ্চিন্তে ভার্জিন অলিভ ওয়েলও খেতে পারেন। এক্সট্রা ভার্জিন এবং ভার্জিন উভয় অলিভ ওয়েলই ভালো। তবে এখন জানা প্রয়োজন উচ্চ তাপে রান্নায় বা ফ্রাই এর সময় কোন তেল বেশি ভালো।
এই আলোচনায় যেতে হলে বুঝতে হবে স্মোক পয়েন্ট কি। স্মোক পয়েন্ট হলো সেই তাপমাত্রা যে তাপমাত্রায় একটি তেল ধোয়ার সৃষ্টি করে। আর এই ধোয়া উৎপন্ন হওয়া মানে তেলটি ভেংগে যাচ্ছে, তেলে বিদ্যমান ফ্যাট গুলো ভেংগে ক্ষতিকর পদার্থ উৎপন্ন করছে এবং এতে বিদ্যমান ভিটামিন-মিনারেল পুড়ে যাচ্ছে ফলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই উচ্চ তাপে রান্না করার থেকে তুলনামূলক কম তাপে বেশি সময় রান্না করা উত্তম। তবে এটাও বিবেচনা করতে হবে ধোয়া তেল পুড়ে হচ্ছে নাকি খাদ্য পুড়ে হচ্ছে।
আসুন জেনে নেই কিছু তেলের স্মোক পয়েন্টঃ
সরিষা তেল ২৫০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড
সয়াবিন, পাম, রাইস ব্রেন ওয়েল ২৩৫-২৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
সানফ্লাওয়ার ওয়েল ২৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড
ভার্জিন অলিভ ওয়েল ২১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল ১৫৫-১৯০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
বাটার ১৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
তিসির তেল ১০৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
আপনি যদি কম তাপে রান্না করতে পারেন তবে রান্নার জন্যও অলিভ ওয়েল সেরা। মধ্যম তাপে রান্নার জন্য খাটি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল থেকে রিফাইন্ড বা ভার্জিন অলিভ ওয়েল গুলো ভালো। তবে ফ্রাই বা উচ্চ তাপে রান্না করার জন্য অলিভ ওয়েল ভালো নয়। ফ্রাই করে খাবার রান্না পরিহার করাই উত্তম। তবে কিছু খাবার ফ্রাই করতে হয় সেক্ষেত্রে সরিষার তেল ব্যবহার করা ভালো কারণ সরিষা তেলের স্মোক পয়েন্ট বেশি।
আমরা জানি অলিভ অয়েল দামী। যেটা প্রত্যহিক ব্যবহারের জন্য অনেক বেশি দামী এবং অনেকের সাধ্যের বাইরে। কোন তেল ব্যবহার করা ভালো এই আলোচনায় যেতে চাইলে কয়েকটি বিষয় বুঝতে হবে।
কোন তেলে কি ধরনের ফ্যাট রয়েছে?
তেলে যে ফ্যাট রয়েছে সেগুলোকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে সেচুরেটেড ফ্যাট শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে এডাল্ট এবং বয়ষ্ক মানুষের হার্ট, ব্রেন এবং রক্ত নালী ব্লকের জন্য দায়ী এই স্যাচুরেটেড ফ্যাট। সুতরাং স্যাচুরেটেড ফ্যাট পরিহার করতে হবে। পাম ওয়েলে ৫০%, রাইস ব্রান ওয়েলে ২৫% স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে বিধায় এদের পরিহার করা উত্তম। অন্য দিকে সয়াবিন তেলে ১৬%, সান ফ্লাওয়ার তেলে ১০%, সরিষা তেলে ১১% এবং অলিভ ওয়েলে ১২% স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে।
আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরের জন্য ভালো। তবে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ২ ধরনের হয়ে থাকে। মনো এবং পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। উভয়ই ভালো তবে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটে ডাবল বন্ড থাকায় এগুলো উচ্চ তাপে ভেংগে যায় এবং ক্ষতির কারণ হতে পারে। মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ তেলঃ অলিভ ওয়েলে ৭৩%, সরিষার তেলে ৬২%, সয়াবিন তেলে ২৩-৪৩% মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। উচ্চ ওলিক এসিড সমৃদ্ধ সানফ্লাওয়ার তেল ৪৫-৮৩% মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। তবে বাজারে এভেইলেবল স্ট্যান্ডার্ড সানফ্লাওয়ার তেল মূলত পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (৬৫%) দিয়ে তৈরী। এছাড়া সয়াবিন তেলে ৫৭% পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে।
ব্যবহার করুন খাটি সরিষার তেল
উপড়ের আলোচনা অনেকের কাছে জটিল মনে হতে পারে। তাই সহজে উপসংহার টানছি। প্রত্যহিক ব্যবহারের জন্য সরিষার তেল অনেক ভালো। এতে রয়েছে ৬২% মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, মাত্র ১২% স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এই তেল উচ্চ তাপে (২৫০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড) টিকে থাকে। সরিষা ছাড়াও সানফ্লাওয়ার তেল এবং সয়াবিন তেল রান্নায় ব্যবহারের জন্য ভালো।
যে তেলই ব্যবহার করুন খেয়াল রেখবেন তেল যেন পুড়ে না যায়। পোড়া তেলে এমন ক্ষতিকারক কিছু উপাদান পাওয়া গেছে যেটা ক্যান্সারের জন্য দায়ী। প্রত্যহিক পোড়া তেল ব্যবহারে গ্যাসের সমস্যা, আলসার, হজমে সমস্যা ইত্যাদির সাথে বৃদ্ধ বয়সে ক্যান্সারের ঝুকি অনেক গুণ বেড়ে যায়।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাট পরিহার করুন। বাজারের অনেক ফাষ্ট ফুডই পাম ওয়েলে তৈরী হয়। শুধু ফাষ্ট ফুডই নয়, অধিকাংশ রেস্টুরেষ্ট পোড়া ও কম দামী তেল ব্যবহার করে থাকে। এসব খ্যাদ্য নিয়মিত খেলে তাৎক্ষণিত সমস্যা না হলেও এর লম্বা মেয়াদী ফল ভালো নয়। তাই সতটা সম্ভব বাসায় স্বাস্থকর খাবার খাবেন।
খুব বেশি তেল ব্যবহার করবেন না। কতটুকু তেল একজন মানুষ দৈনিক বা মাসিক খাবে সেটা সেই মানুষটির রোগ বা স্বাস্থের উপড় নির্ভর করে। তবে একজন স্বাস্থবান রোগ মুক্ত মানুষ দৈনিক ৩০-৩৫ মিলি (মাসিক ১ লিটার) তেল খেতে পারেন।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556 (দুপুর ৩ টায়)
সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল
২৩/৬, রুপায়ন শেলফোর্ড, লেভেল ৮, শ্যামলী। (শিশু মেলার বিপরীতে)
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 09642400300
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd