হিমোগ্লোবিন স্বল্পতাকেই রক্তস্বল্পতা বলা হয়। আমাদের দেশে শিশুদের রক্তশূন্যতা বহুল পরিচিত একটি সমস্যা। বাচ্চাদের গ্রোথ সঠিক ভাবে না হওয়ার অন্যতম কারণও রক্ত স্বল্পতা।
৬ মাস থেকে ৫ বছরঃ ১১+
৫ বছরে থেকে ১১ বছরঃ ১১.৫+
১১ বছর থেকে ১৫ বছরঃ ১২+
এই স্বাভাবিক রেঞ্জের নিচে হলেই তাকে রক্তস্বল্পতা বলে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন।
প্রথম অবস্থায় রক্তস্বল্পতার খুব বেশি লক্ষণ পরিলক্ষিত করা যায়না। ধীরে ধীরে রক্ত স্বল্পতা বাড়তে থাকলে এবং হিমোগ্লোবিন ৮ এর নিচে চলে আসলে তখন লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। জেনে নেই রক্তস্বল্পতার লক্ষণ গুলো।
সাদা / ফর্সা / ফ্যাকাসে দেখানো।
চোখের ভেতরের পাতার লাল ভাব কমে যাওয়া।
অল্প খেলাধুলায় টায়ার্ড হয়ে যাওয়া।
বড় বড় শ্বাস নেয়া এবং শ্বাস কষ্ট।
হার্ট রেট বেড়ে যাওয়া।
বিরক্তি ভাব, ঘ্যান ঘ্যান করা।
মনোযোগের অভাব।
খাবারে অরুচি।
বমি ভাব হওয়া।
নখ চামুচের মত হয়ে যাওয়া এবং নখ ভঙ্গুরতা।
অতিরিক্ত চুল ঝরে যাওয়া।
চোখের নিচে কালি পরা।
জিহবায় ক্ষত হওয়া।
ঠোটের দুই দিকে ক্ষত।
খাবার হজমে সমস্যা হওয়া।
পিকাঃ আজে বাজে জিনিস খাওয়া (পোড়া মাটি, সিমেন্ট, ময়লা, রঙ, আঠা, ছাই ইত্যাদি)
দীর্ঘদিন রক্তস্বল্পতা থাকলে খাদ্যনালী সরু হয়ে যেতে পারে এবং খাবার খেতে কষ্ট হতে পারে।
অনেক বেশি রক্ত স্বল্পতা হলে হার্ট ফেইলর হতে পারে।
আয়রন স্বল্পতা
কৃমি
থ্যালাসেমিয়া
ফলিক এসিড স্বল্পতা
ভিটামিন বি-১২ স্বল্পতা
খাবারের স্বল্পতা বা কম খাওয়া
প্রি-টার্ম বাচ্চা
এক বছরের পূর্বে গরুর দুধ খাওয়া।
ভিটামিন-সি এর স্বল্পতা।
রক্তক্ষরণঃ গ্যাস্ট্রিক আলসার, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি
মা ও বাচ্চার প্লাস মাইনাস রক্ত গ্রুপ।
রক্তের রোগঃ হিমোফিলিয়া, পারপুরা ইত্যাদি।
৬ মাস থেকে ২ বছরের বাচ্চাদের আয়রন স্বল্পতা জনিত রক্ত স্বল্পতা বেশি পাওয়া যায়। এর প্রধান কারণ হলো এই বয়সের বাচ্চাদের বুকের দুধে বেশি আসক্তি এবং সলিডের প্রতি অনীহা। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চারা চাহিদা মত আয়রন পায়না। এছাড়া এই বয়সী বাচ্চাদের খাবারে সাধারণত আয়রন যুক্ত খাবার কম দেয়া হয়।
বাচ্চাকে অধিক পরিমাণে আয়রন যুক্ত খাবার দিতে হবে। চলুন জেনে নেই কোন খাবারে আয়রন বেশি পাওয়া যাবে। খাদ্যে আয়রনের প্রধান উৎসই হলো লাল মাংস যেমনঃ গরু, খাসি, মুরগী ইত্যাদির মাংস এবং কলিজা। সামুদ্রিক মাছও খুবই ভালো সোর্চ। এছাড়া নন-প্রোটিন উৎস গুলো হলো বিভিন্ন সবজির বিচি, মসুর ডাল, লাল আটা, সবুজ শাক-সবজি (ব্রকলি, পালং শাক, পাতাকফি), আলু, টমেটো, কাঠ বাদাম, চিনা বাদাম, ছোলা, কিসমিস, খেজুর, ডিমের কুসুম, তরমুজ এবং আয়রন ফর্টিফাইড সিরিয়াল।
নন-প্রোটিন আয়রন শোষণের জন্য ভিটামিন-সি জরুরী। তাই একই সাথে ভিটামিন সি যুক্ত খাবারও দিতে হবে। ভিটামিন-সি যুক্ত খাবারঃ পেয়ারা, কিউই ফল, স্ট্রবেরি, কমলা, পেপে, ব্রকলি, ফুলকফি, পাতাকফি, টমেটো, আনারস, আমলকি, কালো আংগুর, আলু, আম, কলা, ক্যাপসিক্যাম ইত্যাদি।
রক্ত স্বল্পতার অন্যতম কারণ ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন বি-৯ (ফলিক এসিড) স্বল্পতা। ভিটামিন বি১২ যুক্ত খাবারঃ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, চিজ, দই, গরুর কলিজা, কাঠ বাদাম। ভিটামিন বি-৯ যুক্ত খাবারঃ ডাল, কলিজা, পালংক শাক, ব্রকলি, বিট, ছোলা, মটরশুটি, পেয়ারা, কলা, আম, কমলা।
এছাড়া আমাদের দেশে রক্ত স্বল্পতার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো কৃমি। প্রথম অবস্থায় কৃমির সংক্রমণ এর উপসর্গ খুব একটা প্রকাশ পায়না। কিছু উপসর্গ হলোঃ ওজন কমে যাওয়া, পেটে হালকা ব্যাথা হওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া, খিটখিটে আচরণ বেড়ে যাওয়া, বমি বা কাশি হওয়া, মলদ্বারে চুলকানি হওয়া এবং চুলকানির কারণে ঘুম কমে যাওয়া ইত্যাদি। এজন্য যেসব বাচ্চা রক্তস্বল্পতায় ভুগছে তাদের কৃমির সমস্যা আছে কিনা সেটাও যাচাই করতে হবে।
অনেক বাচ্চারই রক্ত স্বল্পতা দেখা যায় খাবার কম খাওয়া বা না খাওয়ার কারণে। এসব বাচ্চা সাধারণত ওজন স্বল্পতায়ও ভুগে। এরকম ক্ষেত্রে খাবার রুচি ফিরিয়ে আনা গেলে রক্ত স্বল্পতাও ঠিক হয়ে যায়।
৬ মাস বয়সী বাচ্চাদের রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধের জন্য মনিমিক্স ১ প্যাকেট করে দৈনিক ২ মাস দেয়া যাবে। এরপর ৪ মাস বিরতি দিয়ে পুনরায় ২ মাস খাওয়ানো যাবে। তবে বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের সমস্যা থাকলে সেটা বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বন্ধ রেখে ডাক্তার দেখাতে হবে। তবে বাচ্চা পর্যাপ্ত আয়রন যুক্ত খাবার খেলে মনিমিক্স দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
রক্ত স্বল্পতা চিকিৎসা করতে প্রথমেই রক্ত পরীক্ষা করে ফেলতে হবে। সেখানে হিমোগ্লোবিনের লেবেল এবং আরো কিছু প্যারামিটার দেখে চিকিৎসক বাচ্চার রক্তস্বল্পতার সম্ভাব্য কারণ বের করবেন। রক্তস্বল্পতার কারণ কনফার্ম করতে আরো কিছু পরীক্ষা যেমন আয়রন, ফেরেটিন, ভিটামিন বি-১২, ইলেকট্রোফরেসিস ইত্যাদি করার প্রয়োজন হতে পারে। কারণ বের করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করলে ইনশাল্লাহ বাচ্চা সুস্থ হয়ে উঠবে।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556 (দুপুর ৩ টায়)
সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল
২৩/৬, রুপায়ন শেলফোর্ড, লেভেল ৮, শ্যামলী। (শিশু মেলার বিপরীতে)
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 09642400300
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd