১. প্রশ্নঃ বাচ্চাকে সেরেলাক, ব্লেন্ড করা খাবার, কয়েক পদের খাবার মিশিয়ে নরম সেমি সলিড করে ৩ বেলা খাওয়াই। এটা ঠিক আছে কি?
সেরেলাকে অনেক কিছু ব্লেন্ড করা থাকে। সেরেলাক বা অন্য ব্লেন্ড করা খাবার দিলে বাচ্চা খবার চিনতে শিখবে না। বাচ্চা কি খাচ্ছে সেটার সঠিক কোন স্বাদ পায়না। ভাতের স্বাদ কেমন, মাছের স্বাদ কেমন, মাংস কেমন, আলু কেমন বাচ্চা এসব কিছুই জানবে না। এসবে বাচ্চা অভ্যস্ত হয়ে গেলে লং টার্মে বাচ্চার ক্ষতি হবে। কারণ বাচ্চা কোন খাবারের কি স্বাদ সেটা জানবে না। কোনটা তার ভাল লাগছে বুজবে না। নিজে থেকে কোন খাবার খেতে চাইবে না। বাচ্চার ফেবারেট লিষ্টে কোন খাবার যুক্ত হবে না। ফলে বাচ্চা একটু বড় হলে নিজে থেকে কোন খাবার চাইবে না। একই ধরনের খাবার খেতে খেতে বাচ্চার খাবারে অরুচি দেখা দিবে। তাই এধরণের খাবার শুরুতে দেয়া হলেও কিছু দিনের ভেতর ফ্যামেলী খাবারে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া সেরেলাক জাতীয় খাবার প্রতি বেলায় না দিয়ে সপ্তাহে ২-৩ দিন দিতে পারেন।
২. প্রশ্নঃ ডাক্তাররা বাচ্চাকে ১ বছরের আগে চিনি খাওয়াতে মানা করেন। চিনি না খাওয়ালে কি বাচ্চার শরীরে সুগারের ঘাটতি হবে?
উত্তরঃ ডায়াবেটিস এর রোগী ও কিছু হরমোনাল রোগী ব্যাতীত স্বাভাবিক মানুষ বা বাচ্চার জন্য সুগারের অভাব বলে কিছু নেই। আমরা যা খাই তার বেশির ভাগ শর্করা শরীরে বিপাক হয়ে সুগারে পরিনত হয়। তাই আলাদা সুগারের কোন প্রয়োজন নেই আমাদের। মিষ্টি ব্যবহার করা হয় আমাদের স্বাদের জন্য। বাচ্চাকে ১ বছরের আগে চিনি দেয়া ঠিক না। চিনি বাচ্চার ডেভলপিং মাড়ি এবং দাতের জন্য ক্ষতিকারক। চিনি বাচ্চার দাতের ক্যারিজ এর জন্য দায়ী। তবে বাচ্চার খাবারে স্বাদ আনার জন্য মিষ্টি ফল, সবজি, খেজুর ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন।
৩. প্রশ্নঃ ৭ মাসের বাচ্চাকে মধু খাওয়ানো যাবে কি?
উত্তরঃ ১ বছরের আগে মধু দেয়া উচিত না। মধুর ভিতর বটুলিনাম টক্সিন নাকে একটা টক্সিন থাকতে পারে। যেটা বড় মানুষের কোন সমস্যা না করলেও ছোট বাচ্চা এর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। কারণ ছোট বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। যদিও এই ঘটনাটি খুব সচরাচর দেখা যায়না তবুও একটা সম্ভাবনা আছে আক্রান্ত হওয়ার। তাই ১ বছর সম্পন্ন হওয়ার পর বাচ্চাকে মধু দিবেন।
৪. প্রশ্নঃ বাচ্চাকে আপেল সিদ্ধ করে দেয়া যাবে কিনা?
উত্তরঃ আপেলে ভিটামিন সি এবং বি কমপ্লেক্স বেশি রয়েছে। এই দুটো ভিটামিনই হিট সেন্সেটিভ। মানে ৫০-৬০% ভিটামিন রান্নার গরমে নষ্ট হয়ে যায়। তাই যে সব ফল সেদ্ধ না করে খাওয়া যায় সেসব সেভাবে খাওয়াই ভালো। সেদ্ধ করে খেলেও পুষ্টি পাবে, তবে কিছুটা কমে যাবে।
৫. প্রশ্নঃ ৭-৮ মাস গ্যাপে আবার কনসিভ করেছি, বুকে দুধ নাই তাই বড় বাচ্চা বুকের দুধ ছেড়ে দিয়েছে। এখন আবার দুধ আসলে কি আবার খাওয়াবো?
১ বছরের পর বাচ্চার প্রধান খাবার বুকের দুধ নয়, বরং পারিবারিক খাবার। ইসলামে এবং মেডিক্যাল সায়েন্স উভয় বলেছে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে ২ বছর। মানে ২ বছর পর আর খাওয়ানো যাবে না। কারণ এর পর বুকের দুধ খেলে বাচ্চার পারিবারিক খাবার বাধাগ্রস্থ হবে। একই সাথে এই বয়সে বুকের যে দুধ আসবে সেটাও বাচ্চার গ্রোথের জন্য পারফেক্ট নয়। তাই ২ বছরের পর বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে ছাড়িয়ে আনতে হয়। অনেক সময় এটা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ হয়ে দাঁড়ায় মায়েদের জন্য।
এখন যেহেতু আপনার আর একটা বেবী হবে তাই আপনি চাইলে বড় বাচ্চাকে আরো ৬ মাস বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে সমস্যা হলো এখন যে দুধ প্রথমে আসবে সেটা নবজাতক বাচ্চার জন্য পারফেক্ট, বড় বাচ্চার জন্য নয়। এর পরের বিষয় ভাবতে হবে বড় বাচ্চা বুকের দুধ খেলে ছোট বাচ্চার জন্য অপর্যাপ্ত হয়ে যায় কিনা। আর সর্বশেষ হচ্ছে, এখন বড় বাচ্চার বুকের দুধের নেশা চলে গেছে। সেটা পুনরায় ফিরিয়ে এনে ৪-৫ মাস পর যখন তার বুদ্ধি আরো বাড়বে তখন আবার বুকের দুধ ছাড়ানো সহজ বিষয় হবে না। সব মিলে পরামর্শ হলো বড় বাচ্চাকে পুনরায় বুকের দুধ দেয়া উচিত হবে না।
৬. প্রশ্নঃ বাচ্চা রাতে ঘুমের মাঝে ২-৩ বার ফিডার চায়, কি করবো?
দুধ বাচ্চাদের পাকাস্থলিতে ২-৩ ঘন্টা থাকে। শুধু বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চা এজন্য ২-৩ ঘন্টা পর পর খেতে চাইবে। কিন্তু সলিড পাকস্থলিতে থাকে আরো বেশি। এজন্য সলিড খাওয়া বাচ্চা রাতে পেট ভরে খেলে ঘুমের মাঝে তেমন খেতে চাইবে না। বড় জোর একবার চাইতে পারে। তাই রাতের খাবারে যত্নবান হবেন। তেল, চর্বি খাবারের গতিকে হ্রাস করে। সেজন্য রাতের খাবারে চর্বি জাতীয় খাদ্য থাকলে সেটা পেটে বেশি সময় থাকবে। চিজ, বাটার, ঘি এসব প্রাধান্য দিবেন। রাতের খাবার যদি অপরিমিত হয় তাহলে বেশিবার ঘুম থেকে উঠে ফিডার / বুকের দুধ চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে কোন দিন রাতের খাবার অপরিমিত হলে বাচ্চাকে বুকের দুধ বা ফিডার দিতে হবে।
৭. প্রশ্নঃ বাচ্চা বুকের দুধ খায় এমন মা চা খেতে পারবে কিনা?
মায়ের চা-কফি খাওয়া আমরা নিরুতসাহিত করি। আপনি চা কফি বেশি খেলে আপনার শরীর থেকে পানি বেশি বের হয়ে যাবে। এতে আপনার শরীরে পানি কমে গেলে বুকের দুধ কমে যাবে। অন্য দিকে খুব বেশি চা-কফি খেলে সেটার একটা নগণ্য অংশ বুকের দুধের মাধ্যমে বাচ্চার কাছে চলে যাবে। ছোট বাচ্চা চা-কফিতে থাকা ক্যাফেইন হজম করতে পারে না। ফলে সেটা তার শরীরে জমে এবং অনিদ্রার কারণ হতে পারে। সাধারণ ভাবে বলা যায় দিনে ২ কাপ চা বা কফি এমন সমস্যার কারণ হয়না। তাই এর বেশি কা-কফি পরিহার করা উচিৎ।
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556 (দুপুর ৩ টায়)
সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল
২৩/৬, রুপায়ন শেলফোর্ড, লেভেল ৮, শ্যামলী। (শিশু মেলার বিপরীতে)
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 09642400300
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd