মুখে ঘা, বিশেষত শিশুদের মুখে ঘা হলে আমরা অনেকে ধরেই নিই হয় সেটা ভিটামিনের অভাব, আর নয়তো ছত্রাক। গৎবাঁধা ২-৪ টি ওষুধ আছে সবার চেনা, অনেক সময় নিজে নিজেই তা কিনে প্রয়োগ করি ঘরের ছোট্টো শিশুটির ওপর! আচ্ছা, চিকিৎসা কি এতোই সরল? মানুষের মুখে কত শত ধরণের ঘা হয়ে থাকে, কয়টা জানি আমরা? যা জানি, সেটাই বা কতোটুকু সঠিক? চলুন জেনে নিই কতো ভাবে মুখে ঘা হতে পারে-
️আঘাত লাগা: ধারালো/ভাঙা দাঁতের কামড় লেগে, টুথব্রাশ হাত থেকে ফসকে গিয়ে, মাছের কাঁটা বিধে, মারপিট করে, রোড অ্যাক্সিডেন্ট করে বিভিন্নভাবেই মুখগহ্বরে আঘাত লেগে ক্ষত বা ঘা সৃষ্টি হতে পারে।
ভিটামিন বা মিনারেল এর অভাব: ভিটামিন বি-২, বি-৬, বি-৯, বি-১২, আয়রন, জিংক - ইত্যাদি একেকটির অভাবে মুখে একেক রকমের লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
জীবাণুর সংক্রমণ: হতে পারে সেটা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, কিংবা পরজীবির সংক্রমণ।
মুখে ঘা শরীরের অন্য কোনও রোগের সঙ্গেও দেখা দিতে পারে। যেমন- রক্তাল্পতা, যক্ষ্মা, লাইকেন প্ল্যানাস, স্কারলেট ফিভার, লুপাস ইরাইথেম্যাটোসাস, পেম্ফিগাস, মিউকাস মেমব্রেন পেম্ফিগয়েড, ক্রন'স ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, সিফিলিস, AIDS ইত্যাদি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
কোনও ঔষধ, রাসায়নিক পদার্থের প্রভাব
হরমোনের তারতম্য: যেমন- বয়ঃসন্ধি, ঋতুস্রাব, গর্ভাবস্থা।
মুখের ক্যান্সার: তামাক বা তামাকজাত পণ্য, সুপারি, অ্যালকোহল সেবন।
প্রদাহজনিত কারণ
অসংজ্ঞায়িত কারণ
ছবিতে দেখুন, সবগুলো সমস্যাই মুখে, সবগুলোই সাদা। অথচ এই চারটা চার ধরণের রোগ, এগুলোর কারণগুলো যেমন ভিন্ন, তেমনি এদের চিকিৎসাও একটি অপরটি থেকে আলাদা। অনেকে হয়তো ভাবেন, ঘরে অমুক ওষুধটা আছে, ব্যবহার করে দেখিই না কী হয়! কেউ আবার ওষুধের দোকানদারের কাছে, চায়ের আড্ডায় কিংবা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে "অভিজ্ঞদের(!) পরামর্শ" খুঁজে থাকেন। এর ফলে যে ক্ষতি হয় -
কোন্ ঘা কীসের দ্বারা, কীভাবে হচ্ছে, কোন্ ধরণের ঔষধ সেই ঘায়ের ওপর কার্যকর হবে- এসব সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান না রাখা ব্যক্তি ঔষধ সাজেস্ট করলে তা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি!
ঔষধের ভুল বা যথেচ্ছ ব্যবহার এর কার্যকারিতায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। শরীরেরও বিভিন্নভাবে ক্ষতি হয়। কোনোটা সাথে সাথে টের পাওয়া যায়, কোনোটা বহু বছর পর।
ঘা এর জন্যে দায়ী কারণটির গোড়া থেকে চিকিৎসা না করানোয় একই ঘা বারবার হতেই থাকে।
অনেক সময় উল্টাপাল্টা ঔষধ ব্যবহার করার ফলে ঘা সেরে না গিয়ে বরং আরও বেড়ে যেতে পারে।
রোগীর জন্যে উপযোগী নয়, এমন ঔষধ না জেনে, না বুঝে সেবন করার ফলে নানাবিধ মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
কেউ কেউ মুখগহ্বরের স্বাভাবিক কোনও অংশকেও রোগ ভেবে দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকেন। একের পর এক ঔষধ ব্যবহার করেন এবং সারছে না কেন ভেবে অস্থির হন। আসলে সারবে কী! এখানে তো কোনও চিকিৎসারই প্রয়োজন ছিল না।
তাই মুখগহ্বরে ঘা বা অন্য কোনও সমস্যা হলে, তা দেখতে যত সাধারণই মনে হোক না কেন, দ্রুত নিকটস্থ রেজিস্টার্ড চিকিৎসককে দেখিয়ে ফেলতে হবে। তিনি রোগীর কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে, প্রাপ্ত তথ্যের সাথে নিজের পেশাগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় করে রোগ নির্ণয় করবেন এবং চিকিৎসা/পরামর্শ দেবেন।
লেখক-
ডা. ইফফাত সামরিন মুনা, ডেন্টাল সার্জন।
মডারেটর, চাইল্ড ডিজিজ এন্ড কেয়ার (সিডিসি)